রাতে কলেজের নৈশপ্রহরী, দিনে আইনজীবী সহকারী!

বড়লেখা প্রতিনিধি


আগস্ট ১৭, ২০২১
০৬:০৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৭, ২০২১
০৬:০৬ অপরাহ্ন



রাতে কলেজের নৈশপ্রহরী, দিনে আইনজীবী সহকারী!
কারণ দর্শানোর নোটিশ

মোস্তফা উদ্দিন বাদল

একসঙ্গে দুটি চাকরি করার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু মোস্তফা উদ্দিন বাদল ঠিকই সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরির পাশাপাশি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।  

অভিযোগ উঠেছে, বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশপ্রহরীর চাকরির তথ্য গোপন করে আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত লাইসেন্স (নং-২৩৩) নিয়ে বড়লেখা চৌকি আদালতে আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবে কাজ করছেন বাদল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সহকর্মী (আইনজীবী সহকারী) ও মক্কেলের (ক্লায়েন্ট) সঙ্গে অসদাচারণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 

এসব অভিযোগ এনে লাইসেন্স বাতিলসহ বাদলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) রাজিব ইসলাম। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আইনজীবী সমিতি মোস্তফা উদ্দিন বাদলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে তাকে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।  

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোস্তফা উদ্দিন বাদল দীর্ঘদিন ধরে বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি করছেন। একইসঙ্গে তিনি বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবেও কাজ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের নৈশপ্রহরীর চাকরির তথ্য গোপন করে তিনি আইনজীবী সমিতির নিবন্ধিত লাইসেন্স (নং-২৩৩) নিয়েছেন তিনি। বিধি অনুযায়ী একসঙ্গে দুটি চাকরি করার নিয়ম নেই। কিন্তু মোস্তফা উদ্দিন বাদল বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরির পাশাপাশি বিধি ভেঙে বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু বাদল লকাডউন উপেক্ষা করে আদালতে ঘোরফেরা করতেন। আইনজীবী সহকারীদের বসার কক্ষ বন্ধ থাকলেও তিনি জোরপূর্বক তালা ভেঙে ভেতরে বসে কাজ করতেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মী ও মক্কেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।    

অভিযোগকারী বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) রাজিব ইসলাম গতকাল সোমবার দুপুরে বলেন, মোস্তফা উদ্দিন বাদল বড়লেখা সরকারি কলেজের নৈশপ্রহরী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। কিন্তু তিনি এ তথ্য গোপন করে আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবেও কাজ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী কেউ সরকারি চাকরি করলে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবে না। কিন্তু বাদল বিধি ভেঙে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি প্রায়ই সিনিয়র-জুনিয়র সহকর্মী ও মক্কেলদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তিনি জোরপূর্বক আমাদের বসার কক্ষের তালা ভেঙে কাজ করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাকে হুমিক দেন, খারাপ ব্যবহার করেন।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইনজীবী সহকারী (মোহরার) মোস্তফা উদ্দিন বাদলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। একসঙ্গে দুটি চাকরি করার নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

বড়লেখা সরকারি (ডিগ্রি) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জায়েদ আহমদ বলেন, মোস্তফা উদ্দিন বাদল আমাদের কলেজের নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি করছে। আমি জেনেছি, সে বড়লেখা আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) হিসেবেও কাজ করছে। জানার পর তাকে সতর্ক করেছি। এরপরও সে যদি কথা না মানে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালিক বলেন, বড়লেখা চৌকি আদালতের আইনজীবী সহকারী (মোহরার) মোস্তফা উদ্দিন বাদলের বিরুদ্ধে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী একসঙ্গে দুটি চাকরি করা যাবে না। কেউ এভাবে চাকরি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এজে/আরআর-০১