নাম তার 'কাকের বাড়ি'

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
০৫:৫১ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
০৫:৫১ অপরাহ্ন



নাম তার 'কাকের বাড়ি'

বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা দোরগোড়ায়। সূর্য ডুব দিচ্ছে পশ্চিম আকাশে। ঠিক তখনই সুনসান নীরবতার মাঝে কা কা শব্দে প্রাণচঞ্চল বাড়িটি। অন্ধকার হয়ে আসার আগে কাকের ঝাঁক বাড়িটির গাছ ও বাঁশঝাড় ঘিরে ফেলে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই কাকে কালো হয়ে যায় পুরো বাড়িটি। মনে হয় এটি যেন কাকদের স্বর্গরাজ্য।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদেনিমহল গ্রামে এই বাড়ির অবস্থান। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, খুব ভোরে কাকেরা দল বেঁধে খাবারের সন্ধানে তাদের আবাসস্থল ছাড়ে। উপজেলার শহরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা ছুটে বেড়ায়। দিনশেষে সন্ধ্যা নাগাদ তারা ঝাঁক বেঁধে আবারও চলে আসে এই বাড়িতে। 

এলাকাবাসী জানান, ৪০ বছর আগে এই বাড়িতে বসবাস করতেন এখলাস নামের একজন ইমাম। একটি বিরোধের জেরে ইমামকে গলা কেটে হত্যা করে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি। এরপর থেকে ওই ইমামের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখেছে কাকের দল। এখনও তারা রয়েছে। ধীরে ধীরে কাকদের সংখ্যাও বাড়ছে। সেজন্য এলাকার লোকজন বাড়িটিকে বলে ‘কাকের বাড়ি’। জেলা শহর থেকে অনেকটা আড়ালে হওয়ায় মেদেনিমহল গ্রামের এই বাড়িটি এখনও সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেনি। 

গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের গ্রামের এই বাড়িতে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাকেরা বসবাস করে। অনেক কাক দেখে এলাকার মানুষও আনন্দিত। স্থানীয়রা বাড়ির নাম দিয়েছেন কাকের বাড়ি। একটি মৌসুমে এখানে অনেক পাখি আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি এগুলো সংরক্ষণ করার জন্য। অতিথি পাখিরাও এখানে আসে, আবার সময় হলে চলে যায়। 

স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবু তোরাব বলেন, এই ‘কাকের বাড়ি’ আমাদের এলাকার সৌন্দর্য। পাখিগুলো দেখে দর্শকদের মনের মধ্যে আনন্দ জাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই পরিবেশ যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, তবে আমাদের মনের আনন্দ, প্রেরণা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। 

জানা যায়, কাক বিচরণ করে যত্রতত্র। শুধু তাই নয়, মানুষের সান্নিধ্য পেতে এরা বাড়ির আশপাশেও বিচরণ করে। উচ্ছিষ্ট, পচাগলা খাবার খেয়ে মানুষের যথেষ্ট উপকারও করে সামাজিক এই পাখি। দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। এখানে পাতিকাক ও দাঁড়কাক দেখা যায়। 

কাক সর্বভূক পাখি। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়, বাড়ির কার্নিশে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরু ডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। 

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী কামরান আহমদ বলেন, পাখিরা সাধারণত গাছে, ডালপালায় ও লতাপাতায় বসে। কিন্তু বৃক্ষনিধনের ফলে পাখিরা আজ বিলুপ্তির দিকে। একসময় রাজনগর উপজেলায় পাখি বাড়ি ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের অযতেœর কারণে পাখিরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব তারা যেন এই কাকের বাড়ি সংরক্ষণে তৎপর থাকে। এটা আমাদের এলাকার সৌন্দর্য। এই কাকগুলো এলাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, হাজার হাজার কাক এখানে বসবাস করে। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। আমি কাক, বকসহ আমাদের এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাইকে মেদিনিমহল গ্রামে স্বাগত জানাই। 

রাজনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল বলেন, এই বাড়ি সম্পর্কে আগে জানতাম না। আমরা বন বিভাগের মাধ্যমে এই জায়গা পরিদর্শন করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব।


এসএইচ/আরআর-০১