নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ০৯, ২০২১
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ০৯, ২০২১
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় আবারও সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আজ সোমবার (৮ নভেম্বর) এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। আগামী ২২ নভেম্বর আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার সবশেষ সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছিল গত ১২ অক্টোবর। ওইদিন সাক্ষ্য দেন অনন্ত বিজয়ের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম ও পুলিশ কনস্টেবল রাসেল আহমদ। তারা মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। পরে আদালত গত ২৬ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্দিষ্ট করেন। তবে ওই দিন সাক্ষীরা না আসায় আজ সোমবার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্দিষ্ট করেন আদালত। তবে সোমবার আসামিদের আদালতে হাজির করা হলেও সাক্ষীরা না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দেন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল জজ মো. নুরুল আমিন।
আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। বাকি ৮ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩ জন সাক্ষী রয়েছেন। যাদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেলে মামলা যুক্তিতর্ক ধাপে চলে যাবে। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী ২২ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনায় গঠিত আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মোহাম্মদ মনির উদ্দিন সিলেট মিররকে বলেন, ‘আটজন সাক্ষীর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সাক্ষী রয়েছেন। তারা সাক্ষ্য দিলেই মামলাটি যুক্তিতর্কের ধাপে গিয়ে রায়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে চলে যেত। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা কেউ উপস্থিত না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ ২২ নভেম্বর ধার্য করেছেন আদালত।’
আইনজীবী প্যানেল সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এ মামলায় বাকি ৮ জন সাক্ষীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি রয়েছে।
এদিকে বারবার মামলার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনন্ত বিজয় দাশের স্বজনরা। ৬ বছরেও এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় হতাশা তাদের কণ্ঠে।
অনন্ত বিজয়ের ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর সিলেট মিররকে বলেন, ‘৬ বছর হয়ে গেলেও এখনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। যা আমাদের হতাশ করেছে। মামলার এ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা উপস্থিত না থাকা আমাদের হতাশ করেছে।’ দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারের কলাপাড়া এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত বিজয় দাশ। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত।
হত্যাকাণ্ডের দিন রাত অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কানাইঘাটের আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) পলাতক। কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪) কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এছাড়া সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) কারাগারে আছেন। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, গত ১৯ সালের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলার পর গেল বছর মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
এনএইচ/আরসি-১৩