নানা সংকটে হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল

সাইফুর রহমান তারেক, হবিগঞ্জ


ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
১০:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
১০:১৩ অপরাহ্ন



নানা সংকটে হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল

নানা সংকটই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের। হবিগঞ্জের ২১ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবার একমাত্র অবলম্বন এটি।

সম্প্রতি হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। শুধু ডাক্তারই নন- নার্স, স্টাফ, বেড আর ওষুধসহ নানা সংকট সঙ্গী করে নিজেই যেন রোগী হয়ে বসে আছে হাসপাতালটি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ গাইনি, সার্জারি ও কার্ডিওলজি। কিন্তু এসব পদের ডাক্তার এখানে নেই। জরুরি প্রসূতি সেবা পর্যন্ত বাইরে থেকে ডাক্তার এনে দিতে হয়। কর্মরত ডাক্তাররা সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

নিয়ম অনুযায়ী ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ন্যূনতম ৫৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু কাগজে কলমে আছেন মাত্র ২১ জন। এই ২১ জনের মধ্যে আবার ৫ জন রয়েছেন অন্যত্র। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের ৩৬টি পদ শূন্য রয়েছে। ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতালে বাড়েনি বেড, ডাক্তার, নার্স বা স্টাফের সংখ্যা। এই হাসপাতালের ৫ জন চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন।

আর বেতন-ভাতা তুলছেন হবিগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে। ১৬ জন ডাক্তার প্রতিদিন হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন অন্তত ৮ শতাধিক রোগীকে। এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো হাঁফিয়ে উঠছেন ডাক্তাররা। সার্জারি বিভাগে ডাক্তার না থাকায় জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তাররা ওই বিভাগে কাজের পাশাপাশি ৫০-১০০ জন রোগীও দেখছেন প্রতিদিন। হাসপাতালে জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্র চালু থাকলেও গাইনি ডাক্তার স্বল্পতায় নার্সই হয়ে উঠেন একমাত্র অবলম্বন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি জানিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ৫৭টি পদের মধ্যে ৩৬টিই খালি। এ অবস্থায় রোগীদের সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসকদের। 

হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার জানান, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তারের ভয়াবহ সংকট। ১ জন ডাক্তারকে সার্জারি, ওয়ার্ডের নিয়মিত রাউন্ড ডিউটি এবং আউটডোরে রোগী দেখতে হয়। অথচ সার্জারির পর ১ জন ডাক্তারের মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু সময় রেস্ট নিতে হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার বলেন, ‘এখানে ইওসি (জরুরি প্রসূতি সেবাকেন্দ্র) চালু আছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু গাইনি ডাক্তার নেই। প্রতিদিন অসংখ্য প্রসূতি রোগীকে সেবা দিতে হয়। অনেকগুলো ডেলিভারি রোগী থাকেন। সিজারও করতে হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সেবা দেওয়ার জন্য বাইরে থেকে ডাক্তার আনতে হয়। অথবা অন্যান্য বিভাগের ডাক্তারদের এসব সেবা দিতে হয়। এ অবস্থায় রোগীদের সেবাদানে ডাক্তারদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। জরুরি কয়েকটি পদ পূরণ করা গেলে সেবা কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হবে।’

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য চারটি টিউবওয়েল থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তিনটি-ই বিকল থাকে। সচল টিউবওয়েলটিতেও আয়রনের পরিমাণ এত বেশি যে পানি সঙ্গে সঙ্গে পান না করলে লাল হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেককেই ট্যাংকিতে জমানো নোংরা পানি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই বাইরে থেকে পানি কিনে ব্যবহার করছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার বলেন, ডাক্তার, নার্স, স্টাফসহ অন্যান্য শূন্য পদের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই এর সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া টিউবওয়েলগুলো সংস্কার করতে একাধিকবার গণপূর্ত বিভাগে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) রিপন দেব বলেন, হাসপাতালের টিউবওয়েল কয়েকদিন আগেও মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো আবারও নষ্ট হয়েছে কি-না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানায়নি। 

আরসি-২৩