বায়ুদূষণে শীর্ষে হবিগঞ্জ, বিভাগে কম সুনামগঞ্জে

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২২
০১:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২২
০১:৫৩ অপরাহ্ন



বায়ুদূষণে শীর্ষে হবিগঞ্জ, বিভাগে কম সুনামগঞ্জে

সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে হবিগঞ্জ জেলায়। আর সারা দেশের মধ্যেও বায়ুদূষণে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। বিভাগের মধ্যে সর্বনি¤œ বায়ুদূষণ সুনামগঞ্জ জেলায়। এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘৬৪ জেলার বায়ুদূষণ সমীক্ষা ২০২১’ উপস্থাপন করে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। 

ক্যাপসের ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩ স্থানের বায়ুর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা করে এই সমীক্ষাটি তৈরি করেছে। 

সমীক্ষা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও গবেষক দলের প্রধান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্যাপস ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের বস্তুকণার মান পর্যবেক্ষণ করে। পরে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়। 

পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার দৈনিক আদর্শ মান ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। সমীক্ষায় হবিগঞ্জের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ২২০ দশমিক ১১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। আর সুনামগঞ্জ জেলায় তা ৮৯ দশমিক শূন্য ৫ মাইক্রোগ্রাম। 

সারা দেশে জেলাভিত্তিক সমীক্ষায় গাজীপুরে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হলেও শহরভিত্তিক সমীক্ষায় সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ পরিমাপ করা হয়েছে ঢাকায়। এই জেলার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ২৫২ দশমিক ৯৩ মাইক্রোগ্রাম। নারায়ণগঞ্জ জেলার অবস্থান তৃতীয়। নারায়ণগঞ্জের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২২২ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। হবিগঞ্জের অবস্থান চতুর্থ। বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২২০ দশমিক ১১ মাইক্রোগ্রাম। অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর অন্য জেলার মধ্যে ১১তম স্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা। এই জেলায় বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ১৫৪ দশমিক ৮১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। 

দেশের ৩৬টি জেলাকে মধ্যম মানের দূষিত বায়ুর জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা। সুনামগঞ্জের বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ৮৯ দশমিক শূণ্য ৫ মাইক্রোগ্রাম এবং সিলেট জেলায় ৯৭ দশমিক শূণ্য ২ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। 

সমীক্ষায় সারা দেশে মাত্র ১০টি জেলায় বায়ুর মান ভালো পাওয়া যায়। এসব জেলার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে। 

জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, নাটোর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর। 

বিভাগভিত্তিক বায়ুদূষণ

২০২১ সালে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর মান প্রতি ঘনমিটারে ১০৩.৬২ মাইক্রোগ্রাম ছিলো, যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৫৯ গুণ বেশি। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে বায়ুদূষণ নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত মানের বায়ুদূষণ হয়। এই তিন বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর ঘনত্ব যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ১৩৩.৮৫, ১৩৬.০২ এবং ১৪০.২৪ মাইক্রোগ্রাম। অন্যদিকে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ মধ্যম পর্যায়ের দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই পাঁচ বিভাগের বিভাগের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর পরিমাণ যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৬৬.৮৪, ৬৮.৯৪, ৭৬.৫৯, ৯১.৫২ এবং ১১৪.৯৩ মাইক্রোগ্রাম। 

বিভাগীয় শহরের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি

দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরগুলোর গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ এর মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১৫.০৭ মাইক্রোগ্রাম, যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১.৭৭ গুণ বেশি। ক্যপসের গবেষণা থেকে উঠে আসে ৮টি বিভাগীয় শহরের মধ্যে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা (প্রতি ঘনমিটারে ২৫২.৯৩ মাইক্রোগ্রাম) ও তালিকায় সর্বনিম্নে রয়েছে রাজশাহী শহর (প্রতি ঘনমিটারে ৫৬.৪১ মাইক্রোগ্রাম)। দূষণ অনুযায়ী বিভাগীয় জেলা শহর গুলোর ক্রম হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ও রাজশাহী। 

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেগা প্রকল্প, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলোকে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

অন্যদিকে বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রচুর পরিমাণ গাছপালা, প্রাকৃতিক জলাধার প্রভৃতি থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কাজও খুব একটা লক্ষ করা যায়নি।

আরসি-১৭