হঠাৎ করেই থেমে গেল নাবিক হাদিসের কর্মচাঞ্চল্য

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ০৩, ২০২২
০৮:২৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৩, ২০২২
০৮:২৬ পূর্বাহ্ন



হঠাৎ করেই থেমে গেল নাবিক হাদিসের কর্মচাঞ্চল্য

বাংলাদেশি তরুণ মো. হাদিসুর রহমান (৩২)। বরগুনার বেতাগী এলাকার ছেলে হাদিস একটি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার। সাগর আর জাহাজেই কাটে তার কর্মব্যস্ত সময়। তবে তার সব কর্মচাঞ্চল্য থেমে গেল হঠাৎ।

বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ গোলার হামলার শিকার হয়েছে। ওই দিন স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলা হয়। এতে জাহাজে আগুন ধরে নিহত হন তিনি। 

হাদিসুর রহমান সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। তবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিতই। গত সোমবারও বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছিলেন, ভালো আছেন। কিন্তু আজ আর তিনি বেঁচে নেই।

বাংলাদেশি জাহাজটিতে হামলার খবর প্রথমে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিশ্চিত করেন জাহাজটিতে থাকা একজন নাবিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নাবিক বলেন, ‘এয়ার স্ট্রাইক (বিমান হামলা) হয়েছে। আমাদের শিপে (জাহাজে)। আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।’

হাদিসুর রহমান বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে আবদুর রাজ্জাক মাস্টারের একমাত্র ছেলে। তাঁর চাচা বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাদিসুর চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল মাস ছয় আগে। তবে ইউক্রেনে আটকে পড়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। সোমবারও বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে; জানায় জাহাজে তারা সবাই ভালো আছে।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গোলার আঘাত হানার সময় হাদিসুর জাহাজের বাইরে এসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। গোলার আঘাতে জাহাজটিতে আগুন ধরে গেলেও নাবিকেরা নিজেদের চেষ্টায় তা নেভাতে সক্ষম হন। তবে এ ঘটনায় আর কেউ হতাহত হননি বলে জাহাজ থেকে ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) থেকে তাঁদের ফোন করে জানানো হয়েছে।

এদিকে একমাত্র ছেলে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন হাদিসুরের মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরা। বুধবার রাত ১০টার দিকে তাঁরা খবরটা জানতে পারেন। হাদিসুরের মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলাদেশের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটল। সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।

সূত্র: প্রথম আলো

আরসি-০২