সিলেট মিরর ডেস্ক
মার্চ ০৪, ২০২২
০৭:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৪, ২০২২
০৭:৪৪ অপরাহ্ন
দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন ভাসমান বেডে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে ২২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায়। পেঁয়াজের আকারও বড় হয়। ক্ষেতের পেঁয়াজের তুলনায় বেডে হেক্টরপ্রতি ছয় টন বেশি ফলন হয়। তাই ভাসমান বেডে পেঁয়াজ চাষাবাদে ঝুঁকছেন অনেক চাষি। তবুও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষা শেষে নভেম্বরে পানি নামতে শুরু করলে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজের পরিবর্তে চারা রোপণ করতে হয়। ৮০ থেকে ৮৫ দিনে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা যায়। এ পদ্ধতি সারা দেশের জলাবদ্ধ এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারলে আমদানি-নির্ভরতা কমবে।
দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। এর পরও বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছে। কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে আট থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। কিন্তু গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন। তার আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৫.৭১ টন।
তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত অর্থবছর মোট ১২ লাখ ৯৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে দেশে। ২০১৯-২০ সালে হয়েছিল ১১ লাখ ৭৬ হাজার টন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বছরে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে। আর মালয়েশিয়া করে ৫.০৫ লাখ টন এবং যুক্তরাজ্য করে ৩.৫৯ লাখ টন। সে হিসাবে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিতে এখন শীর্ষ দেশ।
পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে মৌসুমে ছয় মাস আমদানি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের পরিচালক শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি বলেন, মৌসুমে মার্চ-মে পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখছে সরকার। এতে পেঁয়াজের ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষক। তবে যে হারে উৎপাদন বাড়ছে তাতে পেঁয়াজ আমদানি ছয় মাস বন্ধ রাখা উচিত। অন্যথায় কৃষক দাম পাবেন না।
শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, ‘হিসাব করে দেখেছি, কৃষক যদি ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন তাহলে তাঁরা লাভবান হবেন। কিন্তু মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম অনেক জায়গায় কেজি ২২ টাকায় নেমেছিল। এটা সমস্যা। ’
রোডম্যাপ
২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। ২০২১-২৩ সালের এই রোডম্যাপে পেঁয়াজ ঘাটতি ১১ লাখ টন ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করে। তাতে পেঁয়াজ ঘাটতির জন্য মানসম্মত বীজের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে মোট এক হাজার ১০০ টন বীজের প্রয়োজন। সরকারিভাবে পাঁচ-ছয় টন, বেসরকারিভাবে ৫০-৬০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। বাকিটা কৃষক উৎপাদন করেন, যা পুরোপুরি মানসম্মত নয়।
পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষি অর্থনীতিবিদ আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষি উৎপাদনশীলতার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে বীজের গুণগত মান। ফলন বৃদ্ধির পুরোটাই নির্ভর করে উচ্চমানসম্পন্ন বীজের ওপর। কৃষকরা সাধারণত উৎপাদন ব্যয় কমাতে নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করেন।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কৃষকের সংরক্ষণ করা বীজে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় মাত্র দুই থেকে আড়াই টন। উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ থেকে প্রতি একরে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। লালতীর-কিং বীজে প্রতি একরে সাত-আট টন, লালতীর-২০ বীজে পাঁচ-ছয় টন এবং লালতীর-হাইব্রিড বীজ থেকে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের চারা থেকে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তিন-চার মেট্রিক টন। তাই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ চাষের বিকল্প নেই।
আরসি-০৫