৪৬.২৫ শতাংশ তরুণী মত প্রকাশে বাধার সম্মুখীন

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ০৫, ২০২২
০৯:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০৬, ২০২২
০৬:১২ পূর্বাহ্ন



৪৬.২৫ শতাংশ তরুণী মত প্রকাশে বাধার সম্মুখীন

কেবল নারী হওয়ার কারণে নিজ পরিবারেই মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হন ৪৬.২৫ শতাংশ তরুণী। এমনকি মত প্রকাশ করতে পারলেও ২২.২৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন তাদের মতামত পরিবারে মূল্যায়ন করা হয় না। যদিও একজন তরুণী পরিবার ও সমাজে পুরুষের মতোই সমান গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার রাখে।

আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশনের পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (৫ মার্চ) দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।

আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, নারীদের প্রতি প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকেই। এজন্য পরিবারকেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নারীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তাদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘একুশ শতাব্দীতে এসে নারীরা যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন তখনও দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের নারীদের নানাবিধ কারণে থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবার প্রতিষ্ঠিত নারীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনও যথাযথভাবে প্রস্তুত নয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নারীদের মানসিক বিপর্যয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী মন্তব্য করে আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন, ‘আমরা যদি নারীদের মানসিকভাবে ভালো রাখতে এবং তাদের আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করতে চাই তবে সমীক্ষায় যে ফলাফলগুলো উঠে এসেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে হবে। দেশের সব নাগরিককে নারীদের প্রতি সঠিক মনোভাব ধারণ করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। এ শিক্ষার শুরু হতে হবে শৈশব থেকে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা বলেন, ‘মেয়েদের আন্তঃব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অ্যাসারেটিভ হতে হবে। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজের মনোভাব সরাসরি বলতে হবে।’

‘এছাড়া মেয়েরা কোনো সমস্যায় পড়লে বসে না থেকে তাদের বন্ধু, রাষ্ট্র ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে সাহায্য নিতে পারে। কোথাও না কোথাও তাদের সব সমস্যার সমাধান আছে। এছাড়াও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিআইডি/সাইবার ক্রাইম ইউনিট যারা প্রতিনিয়ত এ ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন তাদের হিউম্যান সাইকোলোজির বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। কারণ সমস্যা সমাধান শেষ নয়, সমস্যাগুলো গোঁড়া থেকে রুখে দিতে হবে আমাদের।’

নারীদের এই আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিষয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি আস্থার প্রতীক হলেও সামাজিক অশুভ প্রয়োগ ও ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার দরুণ অনেক নারীর কাছে তা এক আতংকের নাম। আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে সাইবার জগতকে নারীদের জন্য নিরাপদ রাখা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পারিবারিক শিক্ষাই পারে সাইবার দুনিয়াকে সুরক্ষিত রাখতে।’

নারীদের নিয়ে করা এই বিশেষ জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন উল্লেখ করেন, নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে, সচেতনতার পাশাপাশি তাদের পর্যাপ্ত মানসিক সমর্থন করতে হবে এবং বুঝাতে হবে যে জীবন এতো মূল্যহীন নয়। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সবাইকে সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

নারীদের নিয়ে করা এ বিশেষ সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট রিফাত হাসান তরফদার বলেন, নারীর অধিকার নিয়ে আমরা আজ কথা বলছি। কিন্তু এই নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছি আমরা? গণপরিবহনে, এমনকি উন্মুক্ত স্থানেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। পরিবারের মধ্যেও নিরাপদ নয় নারী। নারীদের বিচরণের প্রতিটি মাধ্যম হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরাপদ। তবেই আমরা নারী জাগরণ, নারী মুক্তি নিয়ে কথা বলতে পারবো। তা না হলে এ ব্যর্থতা আমাদের পরিবারের, আমাদের সমাজের, আমাদের সবার।

নারীদের সামাজিক ও মানসিক সুরক্ষা প্রদানে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা

১. তরুণীদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিতে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২. নারীর বিচরণক্ষেত্রে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ব স্ব বিচরণক্ষেত্রগুলোকে আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় নিয়ে আসা।

৩. গণপরিবহন (বাস, রেল, রাইড শেয়ারিং) ও তার স্টপেজগুলো সিসি ক্যামেরা স্থাপন। ৪. ইভটিজিং ও যৌন হেনস্তার মতো ঘটনাগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর ভূমিকা রাখা।

৫. শৈশবকালীন যৌন হেনস্তা, বডি শেমিং থেকে রক্ষা করতে পরিবারগুলোকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

৬. নারীর প্রতি বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা জোরদার করা।

৭. নারীর সুরক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর মনিটরিং জোরদার করা।

৮. সব যানবাহনকে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা যেন যেকোন সময়ে যাত্রী তার অবস্থান অন্যদের জানানোর মাধ্যমে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

৯. সব নারী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মরক্ষামূলক ট্রেইনিং দেওয়া।

বি এন-০৬