জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ১৩, ২০২২
০১:৫৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২২
০১:৫৮ পূর্বাহ্ন



জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই জঙ্গি দমন সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেছেন, আমরা জঙ্গিবাদের বিষদাঁতগুলো ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি। যে কারণে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

আজ শনিবার (১২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে ‘শ্বেতপত্র: বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন তিনি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনিস্টিউটের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে সবাই সাড়া দিয়েছে। জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছেলেকে মা আমাদের কাছে ধরিয়ে দিয়েছেন। জঙ্গিরা নিহত হলে তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ কোনো ধর্মের আদর্শ নয়। কোনো ধর্মেই সন্ত্রাসবাদ ও মানুষ হত্যার অনুমতি দেয় না। আমরা সেটা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সারা দেশ ঘুরেছি। জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। শিক্ষক, ছাত্রসমাজ ও জনতা সবাই জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমাদের সহযোগিতা করেছে। যে কারণে আমরা জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নির্মূল করতে না পারলেও তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে পেরেছি।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও একের পর এক দৃশ্য দেখেছি। ইতালির নাগরিক ট্রাভেল সিজার, জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও হত্যাকাণ্ড দেখেছি। খ্রিস্টান ধর্মযাজককে হত্যা প্রচেষ্টা দেখেছি, মসজিদের মধ্যে বোমা হামলা দেখেছি। কিন্তু আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে এখন বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমরা জঙ্গিদের ধরে দিয়েছি। অনেক জঙ্গি জামিনে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু সরকার ও জনগণ সতর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্মের মানুষরা সংখ্যারঘু নয়, জঙ্গিরা সংখ্যালঘু। জঙ্গিদের নিমূল করতে হবে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাস নির্মূলের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফেরানোর কাজ চলছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সরকারের দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গি দমনের কথা বলি, আবার হেফাজতের সঙ্গে বৈঠক করি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তারা ব্লাশফেমি আইন প্রণয়ন ও আহম্মদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানায়। এ ধৃষ্টতা কাম্য নয়।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত দেশে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কোনো ধরণের আপস নয়, ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির আশা প্রকাশ করেন, এই শ্বেতপত্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটনের ব্যবস্থাপত্র প্রণয়নে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহকে উপযুক্ত কর্মসূচি নির্ধারণে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিপদ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করবে। শ্বেতপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরসি-০৮