‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান : প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব পাস

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ০৬, ২০২২
০৯:৪৮ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৬, ২০২২
০৯:৫০ অপরাহ্ন



‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান : প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব পাস

 ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস হয়েছে।

আজ বুধবার (৬ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ অনুযায়ী একটি সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবের ওপর প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষ তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রস্তাবটি পাস হলে অধিবেশন কক্ষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

তারা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে আলোচনার অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'এখানে আমার কোনো ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি এই প্রস্তাবটা সংসদে গ্রহণ হোক, সেটা আমি চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো কর্তৃত্ব চাই না। ' এ সময় বাঙালি জাতি ও দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে হাইকোর্টের এক রায়ে জাতীয় দিবস, সরকারি অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চারণের ওপর জোর দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার আলোকে ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

এ জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ সদস্য শাজাহান খানের আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন এ জাতির ছিল। তা পূরণ হওয়ায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদকে এই বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক। ’

প্রস্তাব উত্থাপনকালে শাজাহান খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জয় বাংলা স্লোগানকে বাঙালি জাতির অপরিহার্য স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগানকে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাদের রণধ্বনি ছিল ‘জয় বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান হিসেবে জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। স্বাধীনতার পর জয় বাংলা স্লোগানকে বাঙালি জাতি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলদার মোশতাক-জিয়া গং ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে পাকিস্তানি ভাবধারায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে।

এমপি শাহাজান খান বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়-(ক) ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। (খ) সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন। (গ) সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশে সমাপ্তির পর এবং সভা-সমাবেশ সমাপ্তির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করবেন।

প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা বলেন, জয় বাংলা দলীয় স্লোগান ছিল না, এটা শুধু যুদ্ধের স্লোগান নয়, এটা ছিল আমাদের জাতীয় স্লোগান। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের জাতীয় জীবনে এই অর্জন ধরে রাখতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই স্লোগানের চেতনাকে ধরে রাখার আহ্বান জানান তারা।

আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুস শহীদ, ওয়াসিকা আয়শা খান ও ফরিদা খানম, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও পীর ফজলুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ।

এদিকে সাধারণ আলোচনা শেষে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম এবং চলতি বছরের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিকেলে এসংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন। গত ২৮ মার্চ জাতীয় সংসদের এই অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের রেকর্ড সংসদে বাজানো হয়।


এএফ/১০