সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা, ভারী বর্ষণ ও ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৪, ২০২২
০২:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৪, ২০২২
০২:০৮ অপরাহ্ন



সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা, ভারী বর্ষণ ও ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যার শঙ্কায় সিলেট। চলতি জুন মাসে স্বল্প মেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত মাসের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিলেট। এর মধ্যেই ফের বন্যা হলে চরম দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা করছেন সিলেটবাসী। এদিকে গতকাল শুক্রবারই সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার প্রধান নদী সারী ও বড়গাং এর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চলতি মাসের প্রথম দশ দিনে সারাদেশে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বা বর্ষার বিস্তার বিস্তার ঘটতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, এর মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তর মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে এ মাসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেছেন, ‘চলতি মাসের প্রথম দশ দিনে সারাদেশে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বা বর্ষার বিস্তার বিস্তার ঘটতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; এর মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারি বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তর মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে এ মাসে।’

এদিকে জুন মাস থেকেই দেশে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। বর্ষা শুরুর প্রথম দিন থেকেই সিলেটে বেড়েছে বৃষ্টিপাত। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আজ শনিবার বেলা ২ পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৬ মিলিমিটার।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল শুক্রবার জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাব অববাহিকা), মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের ব্রক্ষপুত্র, যমুনা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব প্রধান নদ নদীরসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাবে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

সিলেট মিররের জৈন্তাপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটার পর থেকে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। উপজেলার শেওলারটুক, ঢুলটিরপাড়, খারুবিল, বিরাইমারা, কাটাখাল, মোয়াখাই, গড়েরপার, লক্ষীপুর, নলজুরী হাওর, বাওনহাওর, গতিগ্রাম, নিজপাট ইউপির গুয়াবাড়ী, হর্নি বাইরাখেল, ডিবিরহাওর, কেন্দ্রি, কদমখাল, ঘিলাতৈল এলাকার বেশির ভাগ অংশ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে পানি বৃদ্ধির কারনে নি¤œাঞ্চলে ফ্লাস বন্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানান। এ অবস্থায় নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের সর্তকতার সঙ্গে চলাচল করেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া নদীপথে নৌকা চলাচলে সর্তকতা অবলম্বন করার অনুরোধ করেন। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং আনসার সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় সর্তকতা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, মৌসুমি বায়ু সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরও দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হবে। এরপরই বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।

আর সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘আগামী ১২ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে আসবে। আর এই ঢলের পানি সিলেট অঞ্চলের নদ-নদী দিয়ে নামবে। এতে সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সে সময় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তবে এখনো তা খুব নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে সিলেটে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদ-নদীর বাঁধগুলো মেরামত ও সংস্কারের কাজ করা শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যেই মেরামত কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

এদিকে সাম্প্রতিক দুই বন্যার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি সিলেট ও সুনামগঞ্জ। মে মাসের বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার সবগুলোই প্লাবিত হয়। সুরমার পানি উপচে নগরও হয় প্লাবিত। এতে করে চরম দুর্ভোগ পড়েন জেলার লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া টাকার হিসাবে ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকা।

জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে সড়ক ও রাস্তা খাতে ক্ষতি হয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। মৎস খাতে ক্ষতি হয়েছে ১৫ কোটি টাকা, গবাদিপশু-পাখি, খড়-ঘাস খাতে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা, কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি টাকা, শিক্ষাক্ষাতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে দুই দফা বন্যায় সড়ক ও সেতু ভেঙেছে, ক্ষতি হয়েছে ফসলের।

সিলেটের সাধারণ মানুষ বলছেন, এখনো সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষত সারানো যায়নি। সড়ক, কৃষি, মৎস প্রায় সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আবারও স্বাভাবিক জীবনের ফেরার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ফের বন্যার খবর তাদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, আগামী ২ সপ্তাহে গঙ্গা-পদ্মা ও বহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা নেই। তবে মেঘনার কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দক্ষিণ পূর্ব পার্বত্য অববাহিকায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মাঝারি বৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা দেখা দিতে পারে।

এনএইচ/আরসি-০৪