সিলেট মিরর ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
১০:৫৭ অপরাহ্ন

আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
১০:৫৭ অপরাহ্ন

বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক লেগেই আছে। ব্যবসায় নেমেও নানা ধরনের সমালোচনার মধ্যে এবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো সামনে আসছে, তার মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হলো তাঁর বাবার নামের জায়গায় অন্য একজনের নাম ‍উল্লেখ।

সাকিব আল হাসানের বাবার নাম খন্দকার মাসরুর রেজা। কিন্তু সাকিবের ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের কোম্পানির ফরমে বাবার নাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কাজী আব্দুল লতিফ।

এই আব্দুল লতিফ আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুর শ্বশুর। হিরুর হাত ধরেই সাকিব পুঁজিবাজারে নাম লিখিয়েছেন। পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগে ১০ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা দেওয়া হিরুর সঙ্গে সাকিবের নামও ছিল। তবে তদন্তে সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ হয়নি বলে জানাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

হিরু দাবি করছেন, যখন জয়েন্ট স্টকে মোনার্ক হোল্ডিংয়ের নিবন্ধন করা হয়, তখন এই বিষয়টি ছিল না। এর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর আবেদনের সময় এটি ছাপার ভুল হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠান মোনার্কের একজন শীর্ষ কর্মকর্তারও দাবি তাই।

ভুলের বিষয়টি যখন চোখে পড়েছে, তখন কেন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি- এই প্রশ্নে হিরু জানিয়েছেন, তিনি শনিবার এই ভুলের কথা জানতে পেরেছেন, আর রবিবার সেটি সংশোধন করতে পাঠিয়েছেন।

হিরু যে নথিপত্র পাঠিয়েছেন, তাতে তার এই বক্তব্যের সপক্ষেই প্রমাণ দেখা যায়। মূল নথিতে সাকিবের বাবার নাম ঠিকই আছে।

২০২১ সালের ১২ অক্টোবর পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে যে আবেদন জমা দেওয়া হয়, তাতেও সাকিবের বাবার নাম ঠিকই আছে। পরে জয়েন্ট স্টক অফিস থেকেই তা পরিবর্তন হয়ে যায়।

এ বিষয়ে সাকিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মোনার্কের এক কর্মকর্তার দাবি, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল, যেটির দায় আসলে সাকিবের নয়।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন সুজন কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ একটা বাইরের ব্যাপার। যাকে নিয়ে আপনারা বলছেন তিনি নিজেও এখন দেশের বাইরে আছেন বলে আমি যতটুকু জানি। এ বিষয়গুলো তো আমাদের কাছে সেভাবে আসে না। আপনারা যেভাবে শুনেছেন আমরাও সেভাবে শুনেছি। এই বিষয় নিয়ে তাই এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।’

কী বলছেন হিরু

মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসি এই ভুল করেছে। আমাদের কোম্পানির মেমোরেন্ডামে সব তথ্য ঠিক আছে।’

তিনি বলেন, ‘রেজিস্টার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি আরজেএসসি সাকিব আল হাসানের বাবার নামের জায়গায় ভুল করে আমাদের কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসানের বাবার নাম লিখে ফেলেছে।’

সাকিবের বক্তব্য জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেও সেটা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক এই মুহূর্তে দেশেও নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে বেশ কদিন আগে তিনি দেশ ছেড়েছেন।

সাকিবের ব্যবসায়িক অংশীদার আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও একে করণিক ভুল হিসেবে উল্লেখ করেন।

হিরু বলেন, ‘আমরা যখন কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়াতে গিয়েছি, তখন এই ভুল হয়েছে। কাজী আব্দুল লতিফ আমার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের বাবার নাম। এটি একটি প্রিন্টিং ভুল। ভুলে একজনের বাবার নামের জায়গায় আরেকজনের বাবার নাম লেখা হয়েছে।’

সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে যে চক্রটি ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সেই কারসাজি চক্রের হোতা এই হিরু। তাকে ও তার সহযোগীদের ১০ কোটি টাকার বেশি জরিমানাও করা হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংসের মালিকানায় সাকিব ছাড়াও আছেন হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর ও জাভেদ এ মতিন নামে একজন।

সাকিব গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ব্রোকারেজ হাউস মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড যাত্রা শুরু করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে।

কোম্পানি নিবন্ধনের কাজ করেন এ রকম একজন বলেন, ‘এই কোম্পানির (মোনার্ক) তথ্য যখন তৈরি করা হয়েছে, ভুল তখন করা হয়েছে, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসি সেই ভুল তথ্যের ওপর নিবন্ধন দিয়েছে।’

এএফ/০৩