সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ : ৯ মামলায় আসামী ১২শ’ গ্রেপ্তার ১৯

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ২৩, ২০২২
০৩:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০২২
০৩:০২ অপরাহ্ন



সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ : ৯ মামলায় আসামী ১২শ’ গ্রেপ্তার ১৯

সদ্য সমাপ্ত বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগজুড়ে দায়েরকৃত ৯টি পৃথক মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সিলেট জেলা।


বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগে ৯টি পৃথক মামলায় ১২শ’ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছেন। হবিগঞ্জে দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক জিকে গউছকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া নবীগঞ্জে গ্রেপ্তার হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব আহমদ চৌধুরী।


সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালী থানা, জেলার ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, মৌলভীবাজারের সদর, হবিগঞ্জের লাখাই ,নবীগঞ্জ ,বানিয়াচং-এ পৃথক ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১২০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯ জনকে। এখনো তারা কারাগারে রয়েছেন। সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সমাবেশের আগের রাতে সিলেট জেলার বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সিলেটমুখী নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের এই কর্মকাণ্ড সিলেটবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে।


জানা গেছে, গত বুধবার রাতে হবিগঞ্জের লাখাইয়ে জিকে গউছের উপস্থিতিতে গণসমাবেশের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ছুড়ে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার লাখাই থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে।


তবে- লাখাইয়ের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জে প্রচারণাকালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ জেলা বিএনপি নেতা শিহাবসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। একই রাতে বানিয়াচংয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। ঐ সময় পুলিশ ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।


বুধবার সিলেটের ওসমানীনগর ও গোয়ালাবাজারে বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলার দয়ামীরে একই ঘটনা ঘটে। তবে- দয়ামীরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।


এ সময় পুলিশ ঐ এলাকা থেকে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানায় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আর ঐ মামলায় আটক হওয়া দুই কর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।


ওসমানীনগরে হামলার এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গত শনিবার গণসমাবেশে বক্তৃতাকালে উপস্থাপন করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি অভিযোগ করেন- সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ অনেককেই গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। অন্যায়ভাবে তাদের গ্রেপ্তার এবং মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।


গত বুধবার কানাইঘাটে প্রচারণাকালে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ বিএনপি’র ৬ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও ছিলেন। পরে একজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অন্তত দেড়শ’ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।


সমাবেশের আগে ৬ নভেম্বর সিলেটের বিএনপি নেতা আফম কামাল হত্যার পরবর্তী সময়ের চৌহাট্টার ঘটনায় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবার বিকালে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল সংঘর্ষের ঘটনায় ১ জনকে আটক করা হয়। সেখানেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জেও মামলা ও ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।


এদিকে- মৌলভীবাজারে প্রচারণাকালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ ছাত্রদল সভাপতি রুবেলকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় দেড়শ’জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা।


বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা বলেন, আমার গাড়ীতে হামলা হয়েছে আবার আমার দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেফতার করা হয়েছে। সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি এবার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবী জানান তিনি।


বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগজুড়ে গায়েবী অপরাধে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্তত ১৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১২ শ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।


তিনি বলেন, সরকারের বিভাগীয় গণসমাবেশ নস্যাতের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে মানুষ গণসমাবেশে যোগ দিয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা নাকি পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা কীভাবে পুলিশের উপর আক্রমণ করতে পারে। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে হামলা মামলা জেল জুলুমে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। সমাবেশ শেষ হয়েছে আমরা প্রত্যাশা করবো এবার সরকার এসব মামলা প্রত্যাহার করবে এবং দ্রুত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিবে।


এসই/ ০৬