সারী নদীতে বালু খননের নামে বোমা মেশিন স্থাপন

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি


ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
১২:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
১২:০৩ পূর্বাহ্ন



সারী নদীতে বালু খননের নামে বোমা মেশিন স্থাপন
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চুক্তির দাবি কতিত সোহেল গংয়ের সাথে, স্থানীয় প্রশাসন অবগত নন

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বাংলাদেশের নীলনদ খ্যাত সারী নদীতে অবৈধভাবে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু তোলার প্রস্তুতি শুরু করে স্থানীয় সোহেল তাজ গংরা।

সরেজমিনে সেখানে গেলে তারা দাবি করেন সারী নদী খননের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চুক্তি (ডিড) রয়েছে। কিন্তু চুক্তির কোন কপি দেখাতে পারেনি সোহেল তাজ গংরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কিছুই জানেন না। 

সরেজমিনে জানা যায়, ১৪২৯ বাংলা সনে সারী নদী তিন ভাবে বিভক্ত করে দুটি অংশ (সারী-১: সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারী ব্রীজ হতে নিচের অংশ), (সারী-২: সারী ব্রীজ হতে লালখাল পর্যন্ত) এবং (সারী-৩: মামলা ভূক্ত দাগ সমুহ) তারমধ্যে সরকার বাহাদুর শ্রমিকদের মেনুয়েল পদ্ধতিতে (বালতি)  বালু পাথর আহরনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। 

ইজারাদার ব্যতি রেখে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র সোহেল তাজ গং সরকার ঘোষিত ম্যানুয়েল পদ্ধতির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে এরই মধ্যে কামরাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সারী নদী খননেন নামে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু আহরনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ খবর পেয়ে এলাকার বালু শ্রমিক ও এলাকাবাসিরা দ্রুত সেখানে গিয়ে বাঁধা প্রদান করেন। কিন্তু শ্রমিক ও এলাকাবাসীর বাঁধাকে তোয়াক্কা না করে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে সোহেল তাজ গংরা। 

সোহেল তাজ গংদের সাথে বোমা মেশিন বসানের বিষয় জানতে চাইলে তাদের প্রতিনিধি মাসুম আহমদ বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সারী নদী খননের জন্য সিলেটের ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে চুক্তি (ডিড) করে নদীর নাব্যতা সৃষ্টির জন্য সারী নদী খননের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করছি।

তবে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চুক্তির কপি দেখতে চাইলে তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এমনকি সোহেল তাজ এলাকায় অবস্থান করলেও তিনি প্রতিবেদকের সম্মুখে আসেননি। পরে সোহেল তাজের সহযোগী মাসুম গংরা প্রতিবেদককে নানাভাবে সংবাদ প্রচার হতে বিরত থাকার আহবান জানান।

সোহেল তাজ চারিকাটা ইউপির এক সদস্যের মোবাইল ফোনে জানান, আমার সঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সারী নদী খননের জন্য চুক্তি (ডিড) হয়েছে। সেজন্য আমি নদী খনন কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন অবগত আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে ডিসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সেখানে উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর প্রয়োজন নেই। 

নিজপাট ইউপির চেয়ারম্যান মো. ইন্তাজ আলী বলেন, আমি জেনেছি তারা গায়ের জোরে বোমা মেশিন বা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কোন প্রকার অনুমতি ব্যাতিত নদী খনন কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সারী নদীর প্রধান শাখা নদী বড় নায়াগাং নদীর ১০ কিলোমিটার এলাকা বালুতে ভর্তি হয়ে পানি শুকিয়ে গেছে। সেই নদীর তীরবতী পারের বাসিন্দারা পানির জন্য হাহাকার করছে। সেই বড়নয়াগাং নদী খননের প্রয়োজন কিন্তু সেই নদী খনন না করে সারী নদীর নাব্যতা থাকার পরও প্রভাবশালী চক্র অবৈধ ভাবে খনন কাজের নামে বালু লুট করার পায়তারা করছে। তাদের কোন অনুমতি আছে বলে আমার জানা নেই। শ্রমিকদের স্বার্থে যন্ত্র দানব এই মেশিন বন্দের দাবী জানাচ্ছি। 

জৈন্তাপুর উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, সারী নদী খননের কোন অনুমতি নেই। যুগ যুগ ধরে সারী নদীর নাব্যতা রয়েছে। যেখানে বালু জমছে সেগুলো শ্রমিকরা তুলে নিচ্ছে এবং সরকার বাহাদুর ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে। কারই বোমা কিংবা ড্রেজার মেশিন বসানোর কোন অনুমতি নেই। শুধুমাত্র ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বালু আহরণ হবে। যারা বোমা কিংবা ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে তারা অবৈধ কাজ করেছেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ডিসি স্যার অনুমতি প্রদান করবেন উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই পত্র পাবে। কিন্তু নদী খননের বিষয় আমাদের কোন কিছু জানা নেই। যারা এটি করছে অবশ্যই এটা বেআইনি। এলাকাবাসী আমার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি বিষয়টি উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


আরকেএস-০১/এএফ-০৬