খেলা ডেস্ক
জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
০২:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
০২:৪৩ অপরাহ্ন
সাগরিকায় আরেকবার জ্বলে উঠলেন সাকিব আল হাসান। চার-ছক্কার ছন্দে মুগ্ধ করলেন ক্রিকেট ভক্তদের। মাত্র ৪৩ বলে উপহার দিলেন ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। সঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন দলটির বিদেশি তারকা ইফতেখার আহমেদ। দুই তারকার দিনে ফরচুন বরিশালের কাছে পাত্তাই পেল না রংপুর রাইডার্স। সঙ্গে দুজনে মিলে গড়লেন একাধিক রেকর্ডও।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিপিএলে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুরকে ৬৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। এই নিয়ে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে বরিশাল। ১০ পয়েন্ট নিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স আছে শীর্ষে।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় ভাঙে ওপেনিং জুটি। ৮ বলের ১৪ রানের ক্যামিও খেলে হারিস রউফের শিকার হন এনামুল হক বিজয়। একই ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকেও নিজের শিকার বানান রউফ।
জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পর ওপেনার মিরাজকেও হারায় বরিশাল। ২৪ রান করা মিরাজ পড়েন মাহমুদুল হাসানের ফাঁদে। মাহমুদউল্লাহকেও ফেরান হাসান। টানা ৪ উইকেট হারানোর পর বরিশালকে দেখা গেল অন্যরূপে। জুটি বেঁধে দলের চিত্রই পাল্টে দেন সাকিব ও ইফতেখার।
দুপাশ থেকে দুজন দেখান চার-ছক্কার ঝিলিক। রংপুরের বোলারদের তুলোধুনো করে রীতিমতো ঝড় তুললেন সাকিব ও ইফতেখার। দুজনে মিলে পঞ্চম জুটিতে গড়েন ১৯২ রানের জুটি। যাতে লেগেছে মাত্র ৮৬ বল। শেষ ১০ ওভারে দুজন তোলেন ১৬৫ রান আর শেষ ৩ ওভারে তোলেন ৭৩ রান। এই জুটিতেই বরিশাল তোলে ৪ উইকেটে ২৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ।
সাকিব-ইফতেখার জুটিতে শুধু রানের পাহাড় নয়, হয়েছে বিশ্বরেকর্ড। দুজন মিলে ১৯২ রানের জুটি গড়ার পথে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। সাকিব-ইফতেখারের আজকের জুটি পঞ্চম উইকেটে বিপিএলের সেরা জুটি, সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই বিশ্বরেকর্ড!
আগের রেকর্ডটি ছিল ১৭১ রানের। ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে বার্মিংহামের হয়ে নর্থ্যাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ১৭১ রানের জুটি গড়েন অ্যাডাম হোস ও ড্যান মুজলি। সেই রেকর্ড ভাঙেন আজ সাকিব-ইফতেখার।
দুই তারকার রেকর্ড গড়ার দিনে রংপুর হেরে যায় বিশাল ব্যবধানে। রান তাড়ায় প্রতিরোধ তো দূরে লড়াইও জমাতে পাড়েনি রংপুর। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর শেষ দিকে নেওয়াজ-শামীম মিলে চেষ্টা করেও দলকে উদ্ধার করতে পারেননি। রংপুর থেমে যায় ১৭১ রানে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন শামীম। ৩৩ রান করেন নেওয়াজ। ৩১ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম। আর ১৮ রান আসে সিয়ামের ব্যাট থেকে।
১
টি-টোয়েন্টিতে ইফতিখার ও সাকিবের জুটিই এখন পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ছিল বার্মিংহাম বিয়ারসের অ্যাডাম হোসে ও ড্যান মুসলির। ২০২০ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে দুজন যোগ করেছিলেন ১৭১ রান।
বিপিএলে এর আগে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ ছিল ১১৫ রান, গত মৌসুমে খুলনার বিপক্ষে সেটি গড়েছিলেন চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান মিরাজ ও চ্যাডউইক ওয়ালটন।
১৯২*
বিপিএলে যেকোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি এখন ইফতিখার আহমেদ ও সাকিব আল হাসানের। এখন পর্যন্ত একটিই ২০০ রানের জুটি দেখেছে বিপিএল, ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সের ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছিলেন ২০১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি, প্রতিপক্ষ ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। তালিকায় দুইয়ে আছে ২০১৩ সালে খুলনার বিপক্ষে রাজশাহীর লু ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফীসের ১৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
২৩৮/৪
বিপিএলের ইতিহাসে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর এখন এটিই। ফরচুন বরিশাল ছুঁয়ে ফেলল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। ২০১৯ সালে এ মাঠেই কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ৪ উইকেটেই ২৩৮ রান তুলেছিল চট্টগ্রাম। ৪ উইকেটে ২৩৯ রান নিয়ে তালিকার শীর্ষে রংপুর রাইডার্স, যাদের বিপক্ষে আজ এ স্কোর গড়ল বরিশাল।
১৩.৩৯
ষষ্ঠ ওভারে শুরু হয়েছিল সাকিব ও ইফতিখারের জুটি। ৮৬ বলে ১৯২ রানের জুটিতে ওভারপ্রতি উঠেছে ১৩.৩৯ রান। বিপিএলে এর চেয়ে দ্রুতগতির শত রানের জুটি আছে মাত্র একটি। ২০১৯ সালে সিলেটের বিপক্ষে ৪৫ বলে ১০৯ রান তুলেছিলেন রাজশাহীর লরি ইভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাটে। ওভারপ্রতি উঠেছিল ১৪.৫৩ রান।
১
এর আগে ইফতিখার খেলেছেন ১৯৭টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আজকের আগে তাঁর সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৯০ রান, ২০১৫ সালে অ্যাবোটাবাদের বিপক্ষে করেছিলেন পেশোয়ারের হয়ে। আজ পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির দেখা।
১০০*
বিপিএলের এ মৌসুমে তৃতীয় সেঞ্চুরিটি করলেন ইফতিখার। এবার তিনটি সেঞ্চুরিই এল পাকিস্তানিদের ব্যাট থেকে। ৯ জানুয়ারি মিরপুরে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন খুলনা টাইগার্সের আজম খান। সে ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের উসমান খানও। সব মিলিয়ে বিপিএলের এটি ২৮তম সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরি ক্রিস গেইলের, দুটি করে সেঞ্চুরি আছে তিনজনের—আন্দ্রে ফ্লেচার, এভিন লুইস ও তামিম ইকবালের।
৮৯*
ইফতিখারের মতো সেঞ্চুরি না পেলেও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেন সাকিব আল হাসানও। এর আগে ৩৮৭ ইনিংসে সাকিবের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল অপরাজিত ৮৬ রানের। ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে ঢাকার বিপক্ষে সেই ইনিংস খেলেছিলেন খুলনার হয়ে। এ মৌসুমে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ৮০ পেরোলেন সাকিব, ১৪ জানুয়ারি কুমিল্লার বিপক্ষে অপরাজিত ছিলেন ৮১ রান করে।
টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি
জুটি রান দল প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
সাকিব আল হাসান-ইফতিখার আহমেদ ১৯২* বরিশাল রংপুর চট্টগ্রাম ২০২৩
অ্যাডাম হোসে-ড্যান মুসলি ১৭১ বার্মিংহাম নর্দাম্পটনশায়ার বার্মিংহাম ২০২০ *
হাশিম আমলা-ডোয়াইন ব্রাভো ১৫০ ট্রিনবাগো বার্বাডোজ পোর্ট অব স্পেন ২০১৬
যোগেশ তাকাওয়েলে-সাইরাজ বাহুতুলে ১৪৯ মহারাষ্ট্র গুজরাট ওয়াঙ্খেড়ে ২০০৭
ব্যানক্রফট-হিল্টন কার্টরাইট ১৩৭ পার্থ সিডনি সিডনি ২০১৮
মার্কাস স্টয়নিস-জেমস ফকনার ১৩৭ মেলবোর্ন ব্রিসবেন ব্রিসবেন ২০১৭
এএফ/১০