সিলেটের ওসমানী হাসপাতাল দেশসেরা

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
০৭:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩
১০:১৯ অপরাহ্ন



সিলেটের ওসমানী হাসপাতাল দেশসেরা


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় ২০২২ সালে দেশসেরা সরকারি হাসপাতাল নির্বাচিত হয়েছে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা সরঞ্জাম, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তি ও সেবা নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টিসহ নানা দিক বিবেচনায় এই তালিকা করে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ তালিকা তৈরির আগে সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পর্যবেক্ষণ ও মান যাচাইয়ে ওসমানী হাসপাতাল সরজমিন পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম।

সংশ্লিষষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে মোট ৬৬টি। তবে হাসপাতাল রয়েছে শুধু ২৯টির মধ্যে। এসব হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সরকারিভাবে প্রতি বছর র‍্যাংকিং করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ গত বছর র‍্যাংকিংটি করা হয়েছে ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। এতে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা থেকে স্কোরিং করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তা যেমন ওই হাসপাতাল বা সিভিল সার্জন যে তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে পাঠায় তা সরজমিনে পরিদর্শন করা হয়। যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা সঠিক কিনা তা যাচাই করা হয়। সাধারণত যাদের দেয়া তথ্য ভালো বা খারাপ তাদের হাসপাতালগুলোই পরিদর্শন করা হয়। পরে এগিয়ে থাকা ওইসব প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হয়।’

পুরো সিলেট বিভাগের মানুষের ভরসা ওসমানী হাসপাতাল। তাই সবসময়ই এ হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে বেশি। প্রতিনিয়ত এখানে রোগী ভর্তি হন শয্যাসংখ্যার কয়েকগুণ বেশি। রোগীর বাড়তি চাপ নিয়েই নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- ২০২০ সালে হাসপাতালটিতে বেড অকুপেন্সি রেট বা শয্যার বিপরীতে রোগীর হার ছিল ১৭৭ শতাংশ। আগের বছর তা ২২০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখানকার শয্যা সংখ্যা ৯০০ হলেও সব সময় রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে তিন হাজারের মতো রোগী। অপরদিকে, হাসপাতালটিতে রয়েছে জনবল সংকটও। এসব চাপ এবং সংকটের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- এখানে অনেক কম খরচে কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিওথেরাপিসহ জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে পারছেন। শিশু স্বাস্থ্যসেবার মানও ভালো। সম্প্রতি হাসপাতালের চার শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টারকে ২৪ শয্যায় নেয়া হয়েছে। এখানে দিনে ৭০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া সম্ভব।

এছাড়া ওসমানীতে ২০২০ সালে ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে ২৯ হাজার ২৮৭টি, আর বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে ১১ হাজার ৩১০টি। 

ওসমানী সূত্র জানায়, হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসাবান্ধব পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদারের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বর্তমান কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ বায়োমেট্রিক হাজিরা, দায়িত্বপালনকালীন সময়ে সবার নেমপ্লেট ও আইডি কার্ডসহ নির্ধারিত পোষাক পরিধান, দালাল নির্মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্দিষ্ট দিন ও সময় ব্যতিত হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষেধ এবং রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা বন্ধ, হাসপাতালের ভেতর থেকে অবৈধ দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদ এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে। 

তাছাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারের মানোন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে পরিচালক, উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদের প্রতিদিন হাসপাতালে রাউন্ড।  

এদিকে, এক সময় হাসপাতালের রোগীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে নানারকম হয়রানির অভিযোগ ওঠতো। মেডিকেল সার্টিফিকেট পেতে হাসপাতালে দিনের পর দিন দৌঁড়ঝাঁপ দিতে হতো। সার্টিফিকেট পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হতো সংশ্লিষ্ট রোগীকে। বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূইয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই হয়রানি বন্ধ হয়েছে। আগে যেখানে ১২শ’ থেকে দেড় হাজারের মতো মেডিকেল সার্টিফিকেট ইস্যূর জন্য পেন্ডিং ছিল, সেটি কমিয়ে ৩শ’র নিচে আনা হয়েছে। এছাড়া রোগীর বিদায়কালীন ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নার্সিং কর্মকর্তারা বিতরণ করার নির্দেশ দেন পরিচালক। ফলে ছাড়পত্রের জন্য রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না।

হাসপাতালে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ট্রান্সফরমার ও থ্রি ফেজ মিটার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থা আধুনিকরণ, প্রশাসনিক ভবনের উত্তর পাশের ৬ তলা ভবনে লিফট ও আউটডোর ভবনের জন্য ২টি বেড লিফট সংযোজন এবং বর্তমান লন্ড্রি বিল্ডিংয়ের স্থানে একটি আধুনিক লন্ড্রি বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের প্যাথলজি পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড ও এক্সরে বিভাগ ২৪ ঘন্টা খোলা থাকছে।  

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘সারা দেশেই স্বাস্থ্যসেবায় লোকবলের সংকট রয়েছে। তবে এর মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিক হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভালো সেবা পাচ্ছেন। জনবল সংকট দূর করা গেলে সেবার মান আরো ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন- এখানে যেসব সেবা দেয়া হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেবা। যারা জন্মগতভাবে বধির, তাদের কানের ভেতর এ ডিভাইস লাগানো হয়। ঢাকার বাইরে এ সেবা আর কোনো হাসপাতালে দেয়া হয় না। এরই মধ্যে আমরা ২৮টি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট করেছি। গত ছয় মাসে আগে যাদের আমরা ইমপ্লান্ট করেছিলাম তাদের মধ্যে দুটি শিশু এখন কথাও বলতে পারছে। আমরা সেবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’


এএফ/০১