মালান ‘দালান’ বাঁধায় হারে শুরু বাংলাদেশের

খেলা ডেস্ক


মার্চ ০১, ২০২৩
১০:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ০১, ২০২৩
১০:২১ অপরাহ্ন



মালান ‘দালান’ বাঁধায় হারে শুরু বাংলাদেশের


শান্তর হাফভলি বল কব্জির মোচড়ে ঘুরিয়ে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে শূন্যে ঘুষি ছুড়ে মারলেন ডেভিড মালান। হেলমেটের ভেতর থেকে তৃপ্তির হাসি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে ৩ উইকেটে অসাধারণ জয়ের চিত্র আঁকা হলো তার ব্যাটেই।

মুখের চড়া হাসিটা বলে দিচ্ছিল কঠিন পরিস্থিতিতে, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ব্যাটিংটা বেশ আনন্দ নিয়েই করেছেন। বাংলাদেশের দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য ছুঁতে ইংল্যান্ডের বাকি ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছুটেছে। শুরু থেকে লেট অর্ডার পর্যন্ত ছিল আসা-যাওয়ার মিছিল, ব্যর্থতার একেকটি স্তর। স্বল্প পুঁজি নিয়ে সাকিব, তাইজুল, মিরাজ, তাসকিনরা চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু ২২ গজে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মালান। খেলেন ১১৪ রানের নজরকাড়া ইনিংস। ১৪৫ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটিতে জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যায় বাংলাদেশের। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ বব্যধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ৮ বল আগে পাওয়া জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে ১৪৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে দুইয়ে উঠে এসেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

ব্যাটিংয়ে কোনো জোরাজুরি নেই। স্রেফ টাইমিং তার ভরসা। সহজাত ব্যাট স্পিড। এছাড়া পেশির সর্বোত্তম ব্যবহার। গ্যাপ খুঁজে, জায়গা বানিয়ে, বলের মেরিট অনুযায়ী ব্যাটিং। ডেভিড মালানের ব্যাটিং বর্নণা করতে এতোটুকুই যথেষ্ট। ইংলিশ বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য ঢাকার উইকেট একেবারেই অচেনা, কন্ডিশনও কঠিন। কিন্তু মিরপুরের উইকেট তো মালানের ‘নখদর্পণে’।

কেন হবে না? ২০১৩ সাল থেকেই যে বাংলাদেশে নিয়মিত খেলছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তাকে প্রথম উড়িয়ে আনে প্রাইম দোলেশ্বর। শুধু ওই বছরই নয়, পরের বছরেও ঢাকা লিগে প্রাইমের হয়ে খেলেন ইংলিশ ক্রিকেটার। একবার আবাহনী লিমিটেডেও খেলতে এসেছেন এ ব্যাটসম্যান। ২০১৬ থেকে বিপিএলেও খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, কুমিল্লা ওয়ারির্স, খুলনা টাইটান্স ও বরিশাল বুলসে খেলেছেন। যেখানে ২৮ ম্যাচে তার রান ৮৬৯। রয়েছে ১টি সেঞ্চুরি, ৫টি ফিফটি। 

এমন ব্যাটসম্যানের জন্য মিরপুরে রান করা কঠিন কিছু না। তবে আজকের উইকেট ব্যাটিং বান্ধব ছিল না মোটেও। বল বাড়তি টার্ন পেয়েছে। উঁচু-নিচু হয়েছে। সেখানে রয় (৪), সল্ট (১২), ভিঞ্চ (৬), বাটলার (৯) ড্রেসিংরুমে ফিরেন দ্রুত।

মালানের ১১৪ রানের ইনিংসটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা বলে দিচ্ছে আরেকটি পরিসংখ্যানে। তার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন অভিষিক্ত উইল জ্যাক। এছাড়া মঈন আলীর ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। ১৪৫ বলে তার মাটি কামড়ানো ইনিংসটি ইংলিশদের সাফল্যের স্তম্ভ। তাইতো ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। 

তাইজুলের ওয়ানডে দলে অন্তভূক্তি নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। বাঁহাতি স্পিনারই দলের সেরা বোলার। ৫৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে মোস্তাফিজ ছিলেন বিবর্ণ। ৮ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।

দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টস বাংলাদেশের পক্ষেই গিয়েছিল। তামিম টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ব্যাটিং ছিল একেবারেই হতশ্রী। সাকিবের তিন নম্বর পজিশনে আরও একবার সুযোগ পেয়ে দারুণ কাজে লাগিয়েছেন শান্ত। ৮২ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান পায় অতিরিক্ত খাত থেকে।

অতিরিক্ত খাত থেকে পাওয়া রানের সুবাদেই বাংলাদেশের রান দুই’শ পেরিয়ে যায়। নয়তো দলীয় রান ১৮০ হতো কিনা সন্দেহ। ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে তামিম ২৩, পাঁচে নেমে সাকিব ৮, মুশফিকুর রহিম ১৬ রান করেন।

এ ম্যাচে বাংলাদেশের বাড়তি মনোযোগ ছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ফেরায়। দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ শুরুটা কেমন করে সেটা ছিল দেখার। ব্যাটসম্যনদের বাজে দিনে শুরুটা একদমই বাজে হলো। তবে বোলাররা আশার প্রদ্বীপ জ্বালিয়েছেন।

শুক্রবার দুই দল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে। সিরিজ নির্ধারণ সেদিনই হয় কিনা দেখার।


এএফ/০৫