নাসায় যাওয়া নিয়ে 'অলীক' ও 'শাবিপ্রবি প্রশাসন যা বলছে

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি


মার্চ ১৩, ২০২৩
০৩:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২৩
০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন



নাসায় যাওয়া নিয়ে 'অলীক' ও 'শাবিপ্রবি প্রশাসন যা বলছে


গত কয়েকদিন ধরে ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’-১৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ‘অলীক’-এর নাসায় যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ অলীকের অর্থসংকট। যার ফলে নাসায় যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত ছিল দলটির।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসনের ভূমিকা বা সহযোগিতা নিয়ে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছিল। তবে এসব সঙ্কটকে পাশ কাটিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে দেনা-পাওনা (ঋণ) করে নাসায় যাওয়ার টিকেট নিশ্চিত করেছেন টিম অলীকের চার সদস্য।

আজ রবিবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত একটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ধরার কথা রয়েছে তাদের।

এসব বিষয়ে জানতে সিলেট মিরর-এর কথা হয় শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও 'অলীক' দলনেতা আবু সাবিক মেহেদী ও টিমের সদস্য রাফি আদনানের সঙ্গে।

অলীক দলনেতা আবু সাবিক মেহেদী বলেন, ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’ এ ‘বেস্ট ডেটা ইউটিলাইজেশন’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ‘অলীক’। এরপর ২০১৯ নাসা’র ৭ দিনব্যাপী কর্মশালায় আমন্ত্রণ পাই আমরা। তবে ভিসা জটিলতার কারণে আমাদের তখন যাওয়া হয়নি। তাই এবার কোন স্পন্সর কিংবা সহযোগিতা না পাওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিমানের টিকিট বুকিং দিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে অলীকের আরেক সদস্য এস এম রাফি আদনান বলেন, ‘সহযোগিতার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। প্রশাসন থেকেও আমরা সাড়া পায়নি।’

বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন অবহিত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে তাদের জানায়নি। তারা জানে না বিষয়টি এমনও না, অভিভাবক কেন জানবে না? তাদের কেন জানাতে হবে?’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা অলীকের পক্ষ থেকে কোন ধরণের রেসপন্স পাইনি, তারা আমাদের জানায়ও নি, যোগাযোগও করেনি। আমাদের না জানালে কীভাবে সহযোগিতা করবো? এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু করতে পারে না। এখানে একটা নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হয়।’

২০১৯ সালে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘নাসা যাওয়ার জন্য ২০১৯ অলীকের সদস্যরা আমন্ত্রণ পেয়েছিল। তখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন লাখ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে পাঁচ লাখ টাকাসহ মোট ৮ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। তবে তারা যেতে না পারায় সে টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এবারও যোগাযোগ করলে হয়ত কোনো একটা ব্যবস্থা করা যেত।’

এ প্রসঙ্গে রাফি আদনান বলেন, ‘২০১৯ সালে প্রশাসন থেকে যে সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে সেটা আমরা অফিসিয়ালি পায়নি। সেটা ভেতরে ভেতরে হয়েছে, আমাদের পর্যন্ত আসেনি। তারা কত টাকা ব্যবস্থা করেছিলেন তাও আমরা অবগত ছিলাম না।’

এবারের অর্থ সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের লোকাল অর্গানাইজার আমাদের ফান্ড কালেকশন করার কথা ছিল। তবে শেষ মুহুর্তে তারা অর্থ সহায়তা করতে না পারায় আমরা অনিশ্চয়তায় পড়েছিলাম। সময় কম থাকায় কারও সঙ্গে ওভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটি আমাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। কয়েকটা সংগঠনও আমাদের যোগাযোগের করেছে, দেখা যাক কি হয়।’

পরবর্তীতে প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাইলে অলীক সাড়া দিবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে রাফি বলেন, ‘প্রশাসনকে আমরা আগে জানায়নি, তবে আমাদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চয়ই প্রশাসন অবহিত আছেন। আমরা যে টাকা ঋণ করেছি সেটাতো এখন পরিশোধ করতে হবে।তারা যদি সহযোগিতার হাত বাড়াতে চান, আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো।’

একই প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জেনেছি তারা ঋণ করে বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করেছে। আমরা চাই তারা ভালোভাবে তাদের প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে এসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। তাদের জন্য শুভ কামনা রইল। তারা যদি দেশে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আমরা কি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করে দেখব।’

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে রাফি আদনান বলেন, আসলে আমরা অনেক দৌড়াদৌড়ির মধ্যে ছিলাম, কে কি বলেছে সেটা আমরা দেখার সুযোগ পাইনি। হয়ত এখানে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সেটা নিয়ে আপাতত মনোযোগ দিচ্ছি না, আমরা প্রোগ্রামটা ভালোভাবে শেষ করে দেশে ফিরি এটাই চাওয়া। আমরা সকলের দোয়া কামনা করছি।

আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে নাসার সদর দপ্তরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিমগুলোকে সম্মাননা দিবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। এতে অংশ নিতে আজ (রবিবার) দিবাগত রাত একটায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট ধরবেন অলীকের সদস্য আবু সাবিক মেহেদী, এস এম রাফি আদনান, কাজী মাইনুল ইসলাম, সাব্বির হাসান। আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার কথা রয়েছে তাদের।

প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের 'টিম অলীক' ২০১৮ সালে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে 'বেস্ট ইউজ অফ ডাটা' ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭৯টি দেশের ১৩৯৫টি দলের সাথে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হয় অলীক। এরই প্রেক্ষিতে নাসায় আমন্ত্রণ পায় দলটি।


এএফ/০৪