আসামে বাংলাদেশের গুয়াহাটি মিশনের উদ্যােগে স্বাধীনতা দিবস পালিত

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ৩০, ২০২৩
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ৩০, ২০২৩
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন



আসামে বাংলাদেশের গুয়াহাটি মিশনের উদ্যােগে স্বাধীনতা দিবস পালিত
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপুর্ণ গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে: মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী


বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভারতের আসামে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন গুয়াহাটি মিশনের উদ্যােগে বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। 

গত সোমবার (২৭ মার্চ ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আসামের গুয়াহাটিস্থ খানাপাড়ায় হোটেল বিভান্তেতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আসাম সরকারের পরিবেশ ও বন, অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স এবং সংখ্যালঘু বিভাগ কল্যাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত  মন্ত্রী শ্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আসাম রাজ্য বিধান সভায় এমএলএ তরুংগ গগৈ, বিধায়ক লরেঞ্চ ইচলারী, আসাম সরকারের চীফ সেক্রেটারী মনিন্দ্র সিং । অনুষ্ঠানে শুরুতে দু'দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান, আসামের গুয়াহাটি'ত নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ও মিশন প্রধান রুহুল আমিন এবং তাঁর স্ত্রী ডা. নবনীতা হক। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত সাধ্যমত সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছে। যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লাখ  শহীদের সঙ্গে ভারতেরও অনেক সৈনিক শহীদ হয়েছেন। ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত  বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের গভীর বন্ধুতপুর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

তিনি মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। 

মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারী আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্যন্য উচ্চতায় রয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-গুয়াহাটি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করা হবে।  আসাম সরকার শিলচর-সিলেট সরাসরি বাস সাভির্স চালু করতে যাচ্ছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল পথ, নৌ-পথে যোগাযোগ উন্নয়নে আগ্রহী।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামসহ সেভেন সিস্টার রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেট বিভাগের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  

বিশেষ অতিথি আসাম রাজ্য বিধান সভায় এমএলএ লরেঞ্চ ইচলারী বলেন, সম্প্রতি সময়ে আমি বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক অবকাঠােমাগত উন্নয়ন করা হয়েছে। মিউজিয়াম পরিদর্শন করে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছি। বাংলাদেশে বসবাসরত জনজাতি সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। 

বিশেষ অতিথি রাজ্য বিধান সভায় এমএলএ তরুংগ গগৈ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নিহত সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বাংলাদেশের ৫৩ তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি  অভিনন্দন জানান।  তিনি বলেন, আসাম সরকার বাংলাদেশের সাথে বহু মাত্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। দুই দেশ অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আসামের গুয়াহাটি'তে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ও মিশন প্রধান রুহুল আমিন বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অন্তত এক কোটি মানুষকে তৎকালীন ভারত সরকার আশ্রয় দিয়ে ছিলেন। আসামে অন্তত ৩ লাখ মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে ছিল।

যুদ্ধে ভারতীয় সরকার হাজার হাজার সৈন্য সহ সবকিছু দিয়ে সহযোগিতায় করায় তিনি ভারত সরকার এবং তাদের জনগনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, আসামের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য,পযর্টন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে এবং সম্পর্ক উন্নয়নে গুয়াহাটি মিশন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।  ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য গুলোর সাথে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। 

তিনি বলেন,ঢাকা-সিলেট-ডাউকি-শিলং-হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত বাস সার্ভিস পুনরায় চালু করা হবে। 

আসাম সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যের গুলোর মানুষের জন্য ভিসা সহজ করা হয়েছে। উভয় দেশের মানুষ এখন  সহজে ভ্রমনে করতে পারছেন । বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুয়াহাটি মিশন সবরকম সহযোগিতা করে যাবে। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুয়াহাটিস্থ ভুটানের কনসাল জেনারেল জিগমে থিমল্যে নামগয়াল, আসাম সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারী অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স মানবেন্দ্র প্রতাব সিংহ (আইএএস),বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারী ড.লক্ষ্মান্নান (আইএএস),মেঘালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মাহবুবুল হক,ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার জে,ডি শর্মা, গুয়াহাটি রয়েল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. সঞ্জয় প্রতাব সিংহ,ডাউন-টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. নারায়ন চন্দ্র তালুকদার, গুয়াহাটি কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসার ড. রমেশ চন্দ্র ডেকে, মেঘালয় চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লি:'র জেনারেল সেক্রেটারী শ্রী ডলি খংলো, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ গুয়াহাটি চ্যাপ্টারের পরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফরিদ।  

এছাড়া  উপস্থিত ছিলেন আসাম সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন  শিক্ষাবিদ,ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পী ও সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। 

অনুষ্ঠানে জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি নূরুল ইসলাম, জৈন্তাপুর বিয়াম ডা: কুদরত উল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান বেলাল ও  সাংবাদিক ইউসুফুর রহমান অংশ গ্রহন করেন। 

অনুষ্ঠানে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে  আসামের বিভিন্ন সরকারী-বে-সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি,সাহিত্যিক ও শিল্পীদের গুয়াহাটি মিশনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।

পরে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।


এএফ/০২