নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১৬, ২০২৩
০৯:২৯ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২৩
০৮:৪৫ অপরাহ্ন
সিলেটে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে রাত-দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মিলিয়ে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যৎ পাচ্ছেন না মহানগরবাসী। এতে দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত পাশাপাশি নিদারুন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। বিঘ্ন ঘটছে অফিস-আদালতের কার্যক্রমেও।
এদিকে সিলেট মহানগর ও শহরতলি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড)। আর সিলেটের গ্রামাঞ্চলসহ কিছু শহরতলি এলাকায় সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ। কিন্তু বিদ্যুৎ বন্টনের ক্ষেত্রে সিলেট মহানগর ও শহরতলির প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিলেটে চাহিদার অর্ধেকের চাইতেও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) সিলেটে পিডিবির সবগুলো ডিভিশনের চাহিদার মধ্য থেকে ৪২ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ঘাটতি ছিলো ৫৮ ভাগ। যে কারণে শনিবার সকাল থেকেই সিলেট মহানগরের সব এলাকায় ছিলো চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
একদিকে রমজান, অন্যদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ। এমন নাভিশ্বাস পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন ধরেই সিলেটে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইফতারের সময় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায় তেমনি রাতে সেহেরির সময়ও বিদ্যুৎ নেই। দিন রাত মিলিয়ে ৮-১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না সিলেটবাসী। এতে চরম ভোগান্তি্র চরম শিখরে আছেন সিলেটের মানুষ।
![]()
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান সচীব মো. আব্দুস সালাম সিলেট মিররকে জানান আজ রোববার অফিসের প্রথম দিন, স্বাভাবিক ভাবে চাপও বেশি। কিন্তু বিদ্যুতের এই বিভ্রাটের কারনে অফিসের স্বাভাবিক কাযকর্মে প্রচণ্ড ব্যাঘাত ঘটছে। সেই সাথে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিল্পী ও কুশলীদের। সালাম জানান একসময় বেতারের নিজস্ব একটি ট্রান্সফররমার ছিল এখন সেটাও নেই। বেতারের বিদ্যুৎ লাইন পাব্লিক লাইনের সাথে যুক্ত ফলে লোড শেডিং এর খপ্পড়ে পড়ে ব্যাঘাত ঘটছে অনুষ্ঠান নির্মান, শিল্পীদের চেক প্রদান্সহ গুরত্বপূর্ন কাজে।
নগরের হাওয়াপাড়া এলাকার ব্যাবসায়ী ওয়াকিল আহমাদ সিলেট মিররকে জানান ১০ থাকে ১৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ থাকে তারপর নেই দুই ঘন্টার জন্য। এমন পরিস্থিতে ব্যবসা পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি জানান প্রচণ্ড গরম ও লোডশেডিং এর কারনে বিক্রির জন্য আনা দই ও পনির নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ফ্রিজে থাকা ফ্রজেন ফুডও।
নগরের উপশহরে বেসরকারী আইটি কোম্পানির কর্মকর্তা হামিম রহমান জানান বিদ্যুৎ ভোগান্তির ফলে প্রভাব পড়ছে ইন্টারনেটে। বারবার বিদ্যুৎ যাওয়ায় ইন্টারনেট ধীরগতি হয়ে যাচ্ছে। অনেক রাউটারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি কাজ গতীহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন সরকার বিদ্যুত সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে বিপনিবিতান গুলোতে বেশুমার আলোকসজ্জ্বা বিদ্যুৎ ঘাটনির অন্যতম কারন বলে তিনি মনে করেন। তিনি এ বিষয়টি দেখার কেউ নেই উল্লেখ করে বলেন আলোকসজ্জ্বা না থাকলেও কেনাকাটায় কোন প্রভাব পড়তো না।
![]()
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ-ই-আরেফিন (১৬ এপ্রিল) দুপুরে জানান- রবিবা এই সময়ে তাঁর ডিভিশনে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ১৭ মেগাওয়াট.। ঘাটতি ১৩ মেগাওয়াট.। ফলে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর অওতাভুক্ত এলাকায় অনির্ধারিত লোডশেডিং হচ্ছেই। আর সরবরাহ কম থাকায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকে তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
তিনি জানান- সিলেট মহানগর ও শহরতলি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি। আর সিলেটের গ্রামাঞ্চলসহ কিছু শহরতলি এলাকায় সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ। কিন্তু বিদ্যুৎ বন্টনের ক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতের চাইতে পিডিবিকে কম দেওয়া হচ্ছে। পিডিবির চাহিদার অর্ধেকের চাইতেও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তারা।
তবে অভিযোগটি আসলে সঠিক নয় উল্লেখ করে কুমারগাঁও গ্রিডের ইনচার্জ কাজি মুতাসসিম বিল্লাহ বলেন- আমরা ন্যাশনাল গ্রিড থেকেই কম পাচ্ছি। সে অনুযায়ী ডিস্ট্রিবিউট করছি।
এদিকে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন- হঠাৎ করে অতিরিক্ত গরমের কারণে জেনারেশন ফল্ট এবং ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা বেড়ে যাওয়াও এই বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিচ্ছে। গরমের কারণে বাসা বাড়ি, মার্কেট, অফিস পাড়ায় এসির ব্যবহার বেড়ে গেছে। আসন্ন ঈদের কারণে মার্কেট শপিংমলগুলোতে দীর্ঘ সময় আলোক্সজ্জাসহ খোলা থাকছে। পাশাপাশি এখনো অফিস আদালত, কলকারখানা বন্ধ হয়নি তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট অবস্থা আরও তিন-চার দিন থাকবে। এর পরে অফিস আদালত কল কারখানাতে ঈদের বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লোডশেডিং সমস্যা এরকম থাকবে না বলে জানান তিনি ।
এসই/ ০১