হামাস ও ইসরায়েলের আলোচনা চলছে, মধ্যস্থতায় কাতার

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১০, ২০২৩
০২:০৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১০, ২০২৩
০২:০৪ অপরাহ্ন



হামাস ও ইসরায়েলের আলোচনা চলছে, মধ্যস্থতায় কাতার

ইসরায়েলি হামলায় পুড়ছে গাজা।


হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের আলোচনা চলছে। গত শনিবার আকস্মিক হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। এখন ইসরায়েলে বন্দী ৩৬ জন নারী ও শিশুর বিনিময়ে ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্ভাব্য বন্দী বিনিময়সহ মধ্যস্থতার আলোচনায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে গত শনিবার রাত থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে, সেটি এখনো চলমান। আলোচনা এখন পর্যন্ত ‘ইতিবাচকভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে’। 

এদিকে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হামাসের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তাঁরা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি আছেন। 

হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল জাজিরাকে ফোনে জানান, যুদ্ধবিরতি বা এ ধরনের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং যে কোনো রাজনৈতিক সংলাপের জন্য হামাস রাজি। গাজার এই সশস্ত্র গ্রুপটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি কি না এমন প্রশ্নে মুসা আবু মারজুক এসব কথা বলেন। 

এই হামাস নেতা আরও বলেন, ইসরায়েল থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন দশজনকে আটক করে এনেছে হামাস। এর মধ্যে রাশিয়া এবং চীনের নাগরিকও রয়েছেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল–আনসারি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে সব পক্ষের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, রক্তপাত বন্ধ করা, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে, কোনো আঞ্চলিক বিস্তার ছাড়াই সংঘাত যাতে শেষ হয়।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘কোনও আলোচনা চলছে না।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। 

তবে কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলার খবর এলেও উভয় পক্ষের মধ্যেই অগ্রগতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদিও সূত্র বলছে, কাতারের কর্মকর্তারা দোহা এবং গাজায় অবস্থানরত হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। 

গত শনিবার গাজা থেকে আকস্মিকভাবে ইসরায়েল আক্রমণ করলে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে তেল আবিব। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিরোধই করতে পারেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্যে অন্তত ৯০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস এবং বেশ কয়েকজন জিম্মি নিয়ে গাজায় ফেরত যায় কিছু যোদ্ধা। বেশ কিছু এলাকাও হামাস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। 

জবাবে গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। 

সূত্র জানিয়েছে, জিম্মি ইসরায়েলি নারী ও শিশুদের বিনিময়ে হামাস সম্ভাব্য যে ৩৬ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু বন্দীকে মুক্তির প্রস্তাব করছে—তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি ইসলামপন্থী এই গোষ্ঠী। ইসরায়েলি কারাগার থেকে এই ৩৬ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার কোনো বিস্তারিত খবর আগে কোথাও আসেনি। 

এ ছাড়া গাজায় ঠিক কত সংখ্যক ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন সে সংখ্যাও অস্পষ্ট। তবে জানা যাচ্ছে, শনিবারের হামলার সময় ইসরায়েল থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক এবং সেনাদের জিম্মি করেছে হামাস। 

অতীতে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, কাতার এবং মিসর হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। লড়াইয়ের যে তীব্রতা তাতে আলোচনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরায়েল এই মধ্যে তীব্র প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, গাজার ২৩ লাখ মানুষের খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধে ইসরায়েলের অবরোধ আরও কঠোর করা হবে। 

মিসরীয় নিরাপত্তা বিভাগের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মিসর ইসরায়েল এবং হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। এখন লড়াই প্রশমিত করাই তাঁদের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে ইসরায়েলি জিম্মিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। 

মিসর এরই মধ্যে ইসরায়েলকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি শান্ত করার সুযোগ রাখতে হামাসকে বলেছে, ইসরায়েলি বন্দীদের সঙ্গে যেন ভালো ব্যবহার করা হয়। 

তবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যেভাবে বোমা হামলা তীব্রতর করেছে তাতে এই মধ্যস্থতা কঠিন হয়ে উঠেছে। মিসরীয় সূত্রগুলো এমনটিই বলছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাতারের নেতৃত্বাধীন আলোচনার বিষয়ে একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘বন্দী মুক্তির জন্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোনো চুক্তি এখনো হয়নি।’ 

সম্ভাব্য বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে কাতারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সমন্বয় সম্পর্কে জানতে চাইলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি ফোন কলের উল্লেখ করেছে। ওই ফোন কলে উভয়ে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রক্ষায়’ সম্মত হয়েছে। 

হামাসের কাছে এ ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে রয়টার্সের অনুরোধে তারা সাড়া দেয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। ইসরায়েলের সাবেক উপ–জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইরান লারম্যান নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের শর্ত মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব, তারা কত দিন জিম্মি করে রাখতে পারে। আগামী কয়েক দিন গাজার পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য, ওষুধ থাকবে না। তখন তারা কী করবে?’ 

তবে হামাসের হামলায় হতাহত এবং গাজায় বন্দীদের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে অস্থির হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলি স্বজনেরা। ইসরায়েল সরকার তাঁদের আশ্বস্ত করে বলছে, দ্রুত জিম্মিদের উদ্ধারে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর জোট সরকারের উগ্র ডানপন্থী শরিক দলগুলোর চাপে যতই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলুন না কেন, শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলিদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার চাপ তাঁকে প্রশমিত করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অতীতের জিম্মি সংকটের অভিজ্ঞতা ইসরায়েলিদের ভালোমতোই স্মরণে রয়েছে। 

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারের সঙ্গে হামাসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। কাতারের প্রতিনিধিরা এর আগে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। 

এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার ভেন্যু ছিল দোহা। বলতে গেলে এরপরই কাতার বিশ্বব্যাপী কূটনীতির স্পটলাইটে চলে এসেছে। এই আলোচনায় সফলভাবে বন্দী বিনিময় এবং তহবিল মুক্তির চুক্তি হয়। 

হামাসের মূল ঘাঁটি গাজা। তবে এই সশস্ত্র সংগঠনটির কিছু নেতা কাতারের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও অবস্থান করছেন।


এএফ/০৪