শীতের রোগ-ব্যাধি : প্রতিকারের উপায়

গোবিন্দ কর্মকার


নভেম্বর ২০, ২০২৩
১০:০৮ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০২৩
১০:১৬ অপরাহ্ন



শীতের রোগ-ব্যাধি : প্রতিকারের উপায়
স্বাস্থ্য


শীত আসন্ন, শীতের সময় অসুখ বিসুখ বাড়ে না বরং কিছু কিছু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই তীব্র শীত আসার আগেই কিছু রোগের প্রকোপ ঠেকাতে সতর্ক থাকা ভালো।

শীতের সময় কমন অসুখ হলো সর্দি, জ্বর, কাশি। এছাড়া নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, অ্যালার্জি, চোখ উঠা, ডায়রিয়া, খুশকি, খোস পাঁচড়া বা চর্মরোগ প্রভৃতি ও প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

তবে শীত সামনে রেখে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে এসব রোগের জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।


সর্দি-কাশি-জ্বর:

সর্দি-কাশি, জ্বর বা কমন ঠান্ডা লাগা এ শীতে বেশি হয়। এটি সাধারণত ভাইরাসজনিত শ্বাসনালির এক ধরনের সংক্রমন রোগ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ বাড়ে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের ডায়াবেটিস এবং কিডনী রোগ আছে তাদের এই কমন কোল্ড হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই রোগ এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়ায়। সর্দি-জ্বর হলে প্রথমে নাক ও গলার অস্বস্তি লাগে, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধ, মাথা ব্যথা, মাথা ভারী বোধ হওয়া, শরীরে ব্যথা হয়, গলা ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ থাকে।


সর্দি-কাশি, জ্বর প্রতিরোধে করণীয়:

  • সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • হাঁচি দেবার সময় এবং নাকের পানি মুচতে রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করতে হবে।
  • প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরুন, বিশেষ করে তীব্র শীতের সময় কান ঢাকা টুপি এবং গলার মাফলার ব্যবহার করুন।
  • তাজা, পুষ্টিকর খাবার খাবেন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • মাঝে মাঝে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন।


নিউমোনিয়া:

এটি একটি মারাত্মক অসুখ, নিউমোনিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগে। পাঁচ বছরের কম শিশুদের শীতের এই সময়টা ঝঁকিপূর্ণ। এসব নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যু হার বেশি। তবে প্রতিরোধযোগ্য এই রোগটি থেকে রেহাই পেতে এই শীতে কিছু করণীয় আছে।

  • নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে যা করণীয়।
  • সবসময় শিশুর সঠিক যত্ন নিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • শীত উপযোগী হালকা ও নরম গরম কাপড় ব্যবহার করুন।
  • সহনীয় গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান।
  • হাঁচি, কাশি আক্রান্ত মানুষের সামনে শিশুকে যেতে নিষেধ করুন।
  • সুস্থ শিশুর নাক পরিষ্কার রাখুন।
  • শিশুদের সামনে বড়দের হাঁচি, কাশি না দেওয়া বা মুখে রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
  • চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন।
  • সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, ভিটামিন এ ডি গ্রহণ করুন।
  • ইমিউন সিষ্টেম শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন।


অ্যাজমা:

অ্যাজমা বা হাঁপানী রোগীর শীতকাল বিপদজনক। হাঁপানী অ্যাটাক শীতকালে কম বেশি সব অ্যাজমা রোগীদের হয়। তবে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে জটিলতা বা অনেক মারাত্মক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ জন্য যা করণীয়।

  • অ্যাজমা ট্রিগারগুলো জেনে সতর্কভাবে চলুন।
  • শীতের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইনহেলার বা অন্যান্য ঔষধের ডোজ সমন্বয় করে নিন।
  • শীতের তীব্রতা বুঝে গরম কাপড় ব্যবহার করুন।
  • ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশে ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে শোবার ঘরটি উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন।


চর্মরোগ:

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। শুষ্ক বাতাস ত্বক থেকে শুষে নেয় পানি ফলে ত্বক হয়ে পড়ে দুর্বল। ত্বকের ধর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি ঠিকমতো ঘাম বা তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আস্তে আস্তে আরো শুষ্ক, ফাটল ধরে ও দুর্বল হয়। এক সময় ত্বক ফেটে যায়। শীতের সময় তাই চর্মরোগ বাড়ে। বিশেষ করে হাতে পায়ের চামড়া উঠা, চুলকানি, একজিমা, স্ক্যাবিস এবং মাথায় প্রচুর খুশকি দেখা দেয়।


এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে করণীয়

  • অলিভ অয়েল ত্বকে আলাদা আস্তর তৈরি করে বলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শীতের সময় অলিভ অয়েল বা লুব্রিকেন্ট জাতীয় কিছু ব্যবহার করুন।
  • খুশকি দূর করতে অন্য সময়ে চেয়ে শীতে বেশি করে চুলে শ্যাম্পু করুন।
  • হাত ও পায়ের তালু এবং ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাবেন বার বার। ত্বকের সুরক্ষা ময়েশ্চারাইজার যেমন- ভ্যাসেলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
  • বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না বা কড়া আগুনে তাপ পোহাবেন না।


নাক, কান, গলার অসুখ:

এসব সমস্যাও শীতে বাড়ে। শীতকালে নাকের দুই পাশের সাইনাসের ইনফেকশন বেশি হয়। টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যায়। এসব থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত কুসুম গরম পানি পান করুন এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করুন।


বাত ব্যথা:

আর্থ্রাইটিস বা ব্যথার সমস্যা শীতে প্রকোপ হয়। মূলত বয়স্কদেরই এ সমস্যা হয় বেশি। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এনকাইলোজিং, স্পন্ডিওলাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আথ্রাইটিস রোগীদের শীতের সময় চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়।


বাত ব্যথা প্রতিরোধে করণীয় হলো

  • যথাসম্ভব গরম উত্তাপে থাকুন।
  • সবসময় হাত ও পায়ের মোজা পরিধান করুন।
  • ব্যায়াম ও খাদ্যাভাসের মাধ্যমে দেহে অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে আনু।
  • একটানা অনেকক্ষন বসে না থেকে যতটুকু সম্ভব ঘরেই হালকা মুভমেন্ট করুন।
  • গরম ছেঁক বা ফিজিওথেরাপী নিন।

ওষুধ সেবন থেকে প্রতিরোধে জীবনের আয়ু বাড়ে। শীতকালে এই সমস্যা গুলো কিছু নিয়ম মেনেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।



ডা. গোবিন্দ কর্মকার : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন) এমএসিপি (আমেরিকা), কনসালটেন্ট (মেডিসিন) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল



এএফ/১২