বইমেলার দুয়ার খুলছে আজ

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
১০:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
১০:১৩ পূর্বাহ্ন



বইমেলার দুয়ার খুলছে আজ

বছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি, আবার বসছে দেশের লেখক-কবি, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’। গতবারের মতো এবারও ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’জ্বা প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘বাঙালির প্রাণের মেলার’ ৪০তম আসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল ৩টায় উদ্বোধন করবেন। এরপর মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হবে সর্বসাধারণের জন্য।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলায় চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন চিত্তরঞ্জন সাহা। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা। চিত্তরঞ্জন সাহা চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত এই চর্চা একাই চালিয়ে যান। পরে বই বিক্রি করার এই আইডিয়ায় অনুপ্রাণিত হয়ে আরও কয়েকটি প্রকাশনী সেখানে বই সাজানোতে যুক্ত হয়। ১৯৭৬ সালে কিছু প্রকাশক এসে একাত্ম হন এবং আরও দুই বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি তাতে সংযুক্ত হয়। চিত্তরঞ্জন সাহা এক টুকরো চটের ওপর কয়েকটি বই সাজিয়ে যে মেলার সূচনা করেছিলেন, সেই মেলা আজ পুরো জাতির দর্পণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটপাতে চটের ওপর যে মেলা শুরু হয়েছিল, সেই মেলায় আজ কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শত শত বর্ণিল স্টল, দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষের ঢল এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হিসেবে এটি নিজের অবস্থান গড়ে নিয়েছে।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, এবারের বইমেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। এবার ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবার। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬০১ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসেবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। এবার মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান : ভলিউম-২’-সহ কয়েকটি গ্রন্থ উন্মোচন করবেন। এ সময় তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও দেবেন।

এদিকে গতকাল সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দুই অংশেই স্টল, প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বড় বড় সব স্টল ও প্যাভিলিয়ন অংশগ্রহণ করে। সেগুলোর নির্মাণ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে সময়ের আগে তা শেষ করার জন্য দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক-শিল্পীরা।

এবার করোনার মতো মহামারী কিংবা তেমন কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। লিপইয়ার হওয়ায় মিলছে এক দিন বাড়তি সময়। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল সুবিধা। সব মিলে ভালো একটি মেলার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনির বলেন, যেকোনো বারের চেয়ে এবারের বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হবে, পাঠক ও দর্শনার্থী আরও বাড়বে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ আসবে। মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে।

শোভা প্রকাশের প্রকাশক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাগজের দাম বেশি হওয়ায় বইয়ের দামও বাড়ছে। তাই মানুষের বই কেনার হারও কমেছে। তবুও এবারের মেলা অনেক ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি। আমরা বেশ কিছু নতুন বইও নিয়ে আসছি। আশা করি এবার বেশ উপভোগ্য একটি মেলা হবে।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘করোনার পর গত বছরের মেলা কিছুটা এলোমেলো ছিল। এবার মেলা ভালো হওয়ার আশা করছি। কারণ বাংলা একাডেমি এবার সম্পূর্ণ তদারকি করবে। এ ছাড়া আমাদের প্রস্তুতিও ভালো।’

একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বাংলা একাডেমি আবারও একক আয়োজনে ফিরেছে। সম্পূর্ণ আয়োজন আমরা দেখভাল করছি। আমরা চেষ্টা করছি সবচেয়ে ভালো বইমেলা উপহার দিতে। সবার সহযোগিতা পেলে সেটি সম্ভব।’

বইমেলায় থাকছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। বইমেলাকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট হামলার হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বইমেলায় ডিএমপি পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলায় একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মেলা ও এর আশপাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি মেলায় প্রবেশপথে কয়েক ধাপে তল্লাশি করা হবে।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, ১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় বই বিক্রি হবে ২৫% কমিশনে।

এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে না। তা স্থানান্তর করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ১৭০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এবার খাবারের স্টলগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে। নামাজের স্থান, ওয়াশ রুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও অব্যাহত থাকবে।

গত বছরের মতো শিশু চত্বর মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

আরসি-০১