ভোটের রাতে ধর্ষণ : ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড

সিলেট মিরর ডেস্ক


ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪
০৫:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪
০৫:৪৫ অপরাহ্ন



ভোটের রাতে ধর্ষণ : ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড
# ৬ জনের যাবজ্জীবন


নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন রাতে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলায় ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে হওয়া ধর্ষণের মামলায় রায় হলো পাঁচ বছর পর, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. সোহেল (৩৮), মো. স্বপন (৪২), ইব্রাহীম খলিল বেচু (২৫), আবুল হোসেন আবু (৪০), মো. সালাউদ্দিন (৩২), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. মুরাদ (২৮) ও মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের মো. হানিফ (৩০), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), মোশারফ (৩৫), মো. সোহেল (২৮) ও মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮)।

সোমবার রায় ঘোষণার সময় মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) বাদে বাকি ১৫ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মিন্টু ওরফে হেলাল ধর্ষণকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

রায় ঘোষণা ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সোমবার সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে আসামিদের জেলা জজ আদালতের হাজত খানায় হাজির করা হয়। তখন হাজত প্রাঙ্গণে আসামিদের স্বজনদের ভিড় ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।


কী ঘটেছিল সেদিন

ভুক্তভোগী নারী জানান, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় নিজের ভোটকেন্দ্রে তিনি ভোট দিতে গেলে ১০/১৫ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে তাদের পছন্দের প্রতীকে সিল মারতে বলেছিলেন। এ নিয়ে ওই লোকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তারা।

তিনি জানান, এরপর রাত ১২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকেসহ তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাকে বেধড়ক পেটায় এবং টেনে হিঁচড়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।

ওই নারীর অভিযোগ, দুর্বৃত্ত কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তারা তাকে গলা কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। তিনি হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে জীবন ভিক্ষা চাইলে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা না করে ভোর ৫টার দিকে ফেলে রেখে চলে যায়।

সকালে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় পরদিন ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন- স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ (৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), ইব্রাহীম খলিল বেচু (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫) ও মো. সালাউদ্দিন (৩৫)।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা তার বসতঘর ভাঙচুর করে ঘরে ঢুকে বাদীকে পিটিয়ে আহত করে এবং সন্তানসহ তাকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।


তদন্তকালে গ্রেপ্তার হয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন

মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের নাম না থাকলেও ধর্ষণের শিকার ওই নারী অভিযোগ করে আসছিলেন, ভোটের সময় রুহুল আমিনের ‘সাঙ্গপাঙ্গদের’ সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর রাতে তারা বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে তাকে ধর্ষণ করে।

এরপরও চরজব্বার থানা পুলিশ মামলার এজাহার থেকে রুহুল আমিনের নাম বাদ দেয় বলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে নালিশ করেছিলেন ওই নারী।

ওই নারী ও তার স্বামীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন ডিআইজি গোলাম ফারুক। তখন তিনি এ ঘটনায় রুহুল আমিনের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাওয়ার পর জেলা সদরের একটি হাঁস-মুরগির খামার থেকে রুহল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রুহুল আমিন চর জুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। ধর্ষণে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর তাকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।


বিচার পরিক্রমা

মামলা তদন্ত করে রুহুল আমিনসহ আরও সাতজনের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। তারা হলেন- মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮), মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) ও মো. সোহেল (২৮)।

পরের বছর ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালেহ আহমদ সোহেল খান জানান, আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। আসামিপক্ষ চারজন সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করে।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণা দিন ধার্য থাকলেও সেদিন রায় ঘোষণা না করে ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।



এএফ/০৩