টহল জাহাজ দেখলেই মানসিক নি র্যা ত ন!

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ২৪, ২০২৪
০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৪, ২০২৪
০৪:৫০ পূর্বাহ্ন



টহল জাহাজ দেখলেই মানসিক নি র্যা ত ন!


ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই করে নেওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধার করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুদ্ধজাহাজ এবং হেলিকপ্টারের মহড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। এমভি আব্দুল্লাহর আশপাশ দিয়ে আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে গেলেই জাহাজে আটক ২৩ নাবিকের ওপর মানসিক নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে তারা। কখনও অযথাই শরীর তল্লাশি করা হচ্ছে, কখনোবা এক জায়গায় জড়ো করে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। 

জিম্মি ২৩ নাবিকের এই মানসিক সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাহাজে থাকা কয়লা নিয়ে দুশ্চিন্তা। দাহ্য পদার্থে ভর্তি জাহাজটিতে সামরিক অভিযান হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তারা। অবশ্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ মালিকপক্ষ এখনও সামরিক পদক্ষেপের বিষয়কে বিবেচনা করছে না। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় যুদ্ধজাহাজকে দূর থেকে নজরদারি করতে হচ্ছে। কখনও কখনও তারা জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে উড়েও পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু অভিযান চালাচ্ছে না।

এদিকে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি অভিযান চলবে কি না। কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে সামরিক অভিযান বিষয়ে এস আর শিপিং কিছু জানে না। জাহাজ মালিকপক্ষ চায় না সামরিক অভিযান চালানো হোক। তারা চায় আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন। সরকারও তা-ই চায় বলে জানি। তাই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির দিকেই কোম্পানি এগিয়ে যেতে চাইছে।’ আলোচনার অগ্রগতি বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য না দিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকে দেওয়ার মতো তথ্য এখন নেই।’ 

তবে জাহাজে অভিযান চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর একটি সম্মিলিত দল। সোমালিয়া পুলিশের সহযোগিতায় তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও তাদের এ পরিকল্পনায় সায় দিচ্ছে না জাহাজের মালিকপক্ষ। তারা চাইছে, জিম্মি নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফেরত আনতে। অন্যদিকে জিম্মি নাবিকদের স্বজনরাও চায় না জাহাজে অভিযান পরিচালনা করা হোক। কারণ অভিযান পরিচালনা করা হলে জিম্মি নাবিকরা হতাহত হতে পারেন। অন্যদিকে জাহাজে দাহ্য পদার্থ থাকায় অভিযান পরিচালনা করলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে এমভি আব্দুল্লাহর ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, ‘আমরা অভিযানের পক্ষে না। অভিযান চালালে দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় আমার ভাইসহ জিম্মি নাবিকরা বিপদে পড়বেন। আমরা তাদের অক্ষত অবস্থায় না-ও পেতে পারি। এমনও হতে পারে অভিযানের সময় গোলাগুলির একপর্যায়ে জিম্মিরা মারা গেছেন। তাহলে আমরা আটকে পড়া স্বজনদের হারাব। তাই আমরা অভিযানের বিপক্ষে। আমাদের একটাই দাবি- জলদস্যুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিপণ অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে ওদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হোক।’ 

অভিযানের বিপক্ষে মত দিয়েছেন জাহাজটির থার্ড অফিসার তারেকুল ইসলামের স্বজন আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ অভিযানের পক্ষে না। কারণ অভিযান পরিচালনা করলে সেখানে হতাহতের আশঙ্কা আছে।’


জাহাজে শুরু হয়েছে খাবারের সংকট

এদিকে জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি দস্যুরাও জাহাজের খাবার ও পানি ব্যবহার করায় জাহাজে খাবার সংকট শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সেটিতে খাবারের পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জিম্মি নাবিকরা। ছিনতাইয়ের পরপর নাবিকরা জানিয়েছিলেন, জাহাজে ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার রয়েছে। আর সুপেয় পানি রয়েছে ২০০ মেট্রিক টন। ১২ দিনের মাথায় নাবিকরা বলছেন, জাহাজে পানিস্বল্পতা তৈরি হওয়ায় ঠিকমতো গোসল করতে পারছেন না তারা। পানি যাতে না পুরিয়ে যায়, সেজন্য সপ্তাহে এক দিন করে গোসল করার অনুমতি দিয়েছে জলদস্যুরা। 

জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট জিম্মি নাবিক আইয়ুব খানের বরাত দিয়ে তার ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, ‘জাহাজে ব্যবহারের পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে তারা এখন ঠিকমতো গোসল করতে পারছেন না। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাগরের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু যেসব কাজে ফ্রেশ ওয়াটার ব্যবহার না করলেই নয়, ওইসব কাজে সুপেয় পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বেশিদিন পানি থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে। তখন সে বলছিল, সরাসরি কথা বলার সুযোগ নেই। তাই গোপনে কথা বলতে হচ্ছে। গোপনে কথা বলার সময় ওমর ফারুক রাজু জানিয়েছেন, ‘বন্দুকের নলের মাথায় আছি। জলদস্যুরা মানসিক চাপের মধ্যে রাখছে। এমনিতে জলদস্যুরা ভালো ব্যবহার করছে। তবে তাদের মধ্যে দুই-এক জন আছে, যারা কিছুক্ষণ পরপর এসে বিরক্ত করছে।’ 


আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর প্রস্তুতি

ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার পর জলদস্যুরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার প্যান্টল্যান্ড এলাকার সমুদ্র উপকূলে নোঙর করা অবস্থায় রেখেছে। সেখান থেকে জাহাজটি উদ্ধারের পাশাপাশি জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর একটি সম্মিলিত দল। জাহাজটির কাছেই কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে রেখেছে তারা। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে সোমালিয়া পুলিশ।

দস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সোমালিয়া পুলিশ প্যান্টল্যান্ড এলাকায় অভিযান শুরু করেছে, যাতে জলদস্যুরা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়। অবশ্য জাহাজ মালিকপক্ষ ও জিম্মি নাবিকদের স্বজনরা চাইছেন না অভিযান চালানো হোক। জিম্মি নাবিকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারও এখন পর্যন্ত অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি।

গত শনিবার চট্টগ্রামে এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল, তখন তাদের মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখনও যতদ্রুত সম্ভব তাদের মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। এখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেভাবেই উদ্ধার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ 

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ থেকে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে তারা সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়েছে।


প্রতিদিনের বাংলাদেশ-০১/এএফ-০৩