পদার্থের বিস্ময়কণা ‘হিগস বোসন’র আবিষ্কারক পিটার হিগস মারা গেছেন

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ১০, ২০২৪
০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১০, ২০২৪
০৮:৫৬ অপরাহ্ন



পদার্থের বিস্ময়কণা ‘হিগস বোসন’র আবিষ্কারক পিটার হিগস মারা গেছেন


অতিপারমাণবিক কণার ভরের উৎস খুঁজতে গিয়ে ‘হিগস বোসন’ কণার অস্তিত্বের ধারণা দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী, সেই ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগস ৯৪ বছর বয়সে মারা গেছেন।

পিটার হিগস তার তত্ত্বে বলেছিলেন, শনাক্ত হয়নি- এমন এক কণার কল্যাণেই মহাবিশ্বের সবকিছু ‘ভর’ পেয়েছে, আর ওই কণার কারণেই অটুট আছে মহাবিশ্ব।

তার সেই তত্ত্ব বদলে দিয়েছিল বিজ্ঞানের গতিপথ। প্রায় অর্ধশতক পর আরেক যুগান্তকারী গবেষণায় প্রমাণ হয়, ‘হিগস বোসন’ কণা সত্যিই আছে। তারই স্বীকৃতিতে ২০১৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান পিটার হিগস।

বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় নিজের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিজ্ঞানী। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

প্রায় পাঁচ দশক এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন হিগস। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের প্রতিভাধর বিজ্ঞানী, যার দূরদর্শী চিন্তা ও কল্পনা এই বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে সমৃদ্ধ করেছে।

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, হিগস ছিলেন নতুন যুগের উঠতি বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণার উৎস। তার প্রয়াণে তার পরিবার শোকগ্রস্ত।

এই ব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুই কণার সমষ্টি। কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই কণারা একে অন্যকে কাছে টানত না, যদি না তাদের ভর থাকত। ভর না থকেলে এই কণারা কেবলই ছুটে বেড়াত, আর এই মহাবিশ্বের চেহারা হত অন্যরকম।

কিন্তু এই কণাদের ভর যোগাচ্ছে কে, সেই প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের তাড়া করে ফিরেছে যুগের পর যুগ। ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ফিজিকাল রিভিউ লেটারস’-এর দুই প্রবন্ধে প্রাথমিক কণার ভরের উৎস নিয়ে তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা হাজির করা হয়।

এর একটি প্রবন্ধের লেখক ছিলেন ফ্রাঁসোয়া এংলার্ট ও রবার্ট ব্রাউট। অন্য তত্ত্বটি দেন পিটার হিগস।

তাদের প্রস্তাব করা ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেলে’ একটি কণার কথা বলা হয়,  যার নাম রাখা হয় পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যোন্দ্রনাথ বসুর নামে।  তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার এই মত অনুযায়ী, মহাবিশ্বের সবকিছুই ‘ভর’ পেয়েছে এই হিগস বোসন কণার মাধ্যমে। এ কারণে পরে গণমাধ্যমে ওই কণার নাম হয়ে যায় ‘ঈশ্বর কণা’।

তত্ত্বের সেই হিগস-বোসন কণা যে বাস্তবেও আছে, ২০১২ সালে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইউরোপের সার্ন গবেষণাগারে।

জেনেভার কাছাকাছি ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী ইউরোপীয় পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র সার্নে লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে বিগ ব্যাংয়ের ‘মিনি সংস্করণ’ সৃষ্টি করে হিগস-বোসন পাওয়ার ঘোষণা দেন বিজ্ঞানীরা।  

এরপর ২০১৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান পিটার হিগস ও ফ্রাঁসোয়া এংলার্ট। তার দুই বছর আগে মারা না গেলে রবার্ট ব্রাউটও সেই পুরস্কারের অংশীদার হতেন। 

নোবেল পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লাজুক স্বভাবের পিটার হিগস বলেছিলেন, “৪৮ বছর আগে আমি যেটা করেছিলাম, আজ প্রমাণ হয়েছে যে সেটা ঠিক ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বিষয়টা এতটুকুই। নির্ভুল ছিলাম, এটা প্রমাণ হওয়া আনন্দেরই বটে।”

তবে সেই প্রমাণ যে জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না।



এএফ/০৩