জয়ের চৌকাঠে পা রেখেও হেরে গেল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক


জুন ১১, ২০২৪
০৪:১৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১১, ২০২৪
০৪:১৪ পূর্বাহ্ন



জয়ের চৌকাঠে পা রেখেও হেরে গেল বাংলাদেশ


ভারত-পাকিস্তান মহারণের পুররাবৃত্তিই ঘটল যেন ঠিক পরেরদিন-বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে। শক্তিশালী প্রোটিয়াসদের চেপে ধরে জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২ বলে যখন ৬ রান যখন দরকার, কেশব মহারাজের ফুল টস বল লং অনে সজোরে পেঠালেন মাহমুদউল্লাহ। ইস্, শেষ মুহূর্তে এইডেন মারক্রাম যদি এমন দূর্দান্ত ক্যাচটা না নিতে পারতেন? এ আফসোস সহজে ভুলবে কী বাংলাদেশ! বারবার পুনরাবৃত্তিতে ‘তীরে এসে তরী ডুবলো বাংলাদেশ’- আক্ষেপ বাক্যও পানশে। বরং এ ম্যাচের পর একটু নতুন করে বলা যায়- ‘জয়ের চৌকাঠে পা রেখেও হেরে গেল বাংলাদেশ।’

জয়ের চৌকাঠে পা তো রেখেছিলই বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১১৪ রান তাড়ায় শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। শেষ ওভারে ১১ রান। ২ বলে দরকার ৬, মাহমুদউল্লাহ লং অনে উড়িয়ে মারলেন মহারাজের বল। কিন্তু বাউন্ডারি পার হওয়ার আগেই সেটি দারুণ নৈপুণ্যে তালুবন্দি করে ফেললেন মার্করাম। একটু এদিক সেদিক হলেই তো সেটি ছক্কায় পরিণত হতো।  এরপর ক্রিজে আসা তাকসিনও পেয়েছিলেন ফুল টস বল। মারলেনও সজোরে। কিন্তু টাইমিং যথাযথ হলো না। বিজয়ে হাত ষ্পর্শ করতে করতে যেন হাত ছাড়া হয়ে গেল বাংলাদেশের। 

নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে প্রোটিয়াদের মাত্র ১১৩ রানে থামিয়ে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। কারণ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচে এর চেয়ে কম রান করে জেতার পূর্বে কোনো নজির ছিল না। এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ১১৯ রান করে নিউজিল্যান্ডকে এবং চলতি আসরে গতকালই ভারত ১১৯ রান করে পাকিস্তানকে হারায়। তাছাড়া রান তাড়ায় বাংলাদেশ অনেকটা সময় পথেই ছিল। কিন্তু শেষ দিকে দিক হারিয়ে মেলাতে পারেনি সমীকরণ। বাংলাদেশকে ১০৯ রানে থামিয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে এ নিয়ে ৪ বার ৫ বা তার কম রানে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বের আর কোনো দল দুইবারের বেশি গড়তে পারেনি এই কীর্তি।

অথচ রান তাড়ায় ১৫ ওভার শেষেও ভালো অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ৬ উইকেট হাতে রেখে ৩০ বলে করতে হতো ৩১ রান। সেখান থেকে পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে মহারাজের জন্য ১১ রান রাখেন তিন পেসার আনরিক নরকিয়া, কাগিসো রাবাদা ও ওটনিয়েল বার্টম্যান। প্রথম বলে ওয়াইড দিলেও কোনো বাউন্ডারি হজম না করে মাত্র ৬ রান দেন মহারাজ। তিনটি ফুল টস পেয়েও ছক্কা মারতে পারেননি জাকের আলি, মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন।

মুখোমুখি লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সবচেয়ে কম রানে থামিয়ে রান তাড়ায় শুরুটা তেমন মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। 

দ্বিতীয় ওভারে তানজিদ হাসান ফিরলেও পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট হারায়নি তারা। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাসের সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে আসে ২৯ রান।

সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসেই লিটনকে ফেরান মহারাজ। ইনসাইড আউট করে বড় শটের খোঁজে কাভারে মিলারের হাতে ক্যাচ দেন ১৩ বলে ৯ রান করা লিটন।

কিন্তু এরপর টানা দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে টাইগাররা। সপ্তম ওভারে এসে লিটন বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন। কেশভ মহারাজের ঘূর্ণিতে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি, ১৩ বলে করেন ৯।

পরের ওভারে অ্যানরিখ নরকিয়াকে হুক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ৪ বলে করেন ৩ রান।

অধিনায়ক শান্ত দায়িত্ব নিয়ে খেলছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন। নরকিয়ার শিকার হওয়ার আগে ২৩ বল খেলে এক ছক্কায় ১৪ রান করেন তিনি।

এরপর তাওহিদ হৃদয় আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৫ বলে ৪৪ রানের জুটিতে ম্যাচ অনেকটাই বের করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ৩৪ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৭ করা হৃদয়কে দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হয়। রাবাদার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, আম্পায়ার্স কলে আউট হয়েছে।

জাকের আলি পরের দিকে রানের চাহিদা মেটাতে পারেননি। ৯ বলে ৮ করে ফেরেন। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ২৭ বলে ২০ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশভ মহারাজ ২৭ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। ২টি করে উইকেট কাগিসো রাবাদা আর এনরিখ নরকিয়ার।

এর আগে রৌদ্রজ্জ্বল সকালে টস হেরে শান্ত বলেছিলেন, তিনিও আগে বোলিংই নিতেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের মন্তব্যের যথার্থ প্রমাণ করতে একদমই সময় নেননি পেসাররা। প্রথম ওভারে কুইন্টন ডি ককের কাছে একটি করে ছক্কা-চার হজম করলেও শেষ বলে অন্য ওপেনার রেজা হেনড্রিকসকে ফেরান তানজিম হাসান। নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার ডি কককে বোল্ড করেন তানজিম। তানজিমের পর চতুর্থ ওভারে তাসকিন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে ৪ রানে ফেরান। পরের ওভারে ফের উইকেট নেন তানজিম।

এবার তার শিকার ট্রিস্টান স্টাবস। ৫ বলের মোকাবেলা করা এই ব্যাটার ডাক মারেন তানজিমের বলে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

২৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ২৫ রান তুলতে পারে তারা।

তবে পাওয়ার প্লের পর ছন্দ হারায় বাংলাদেশ বোলিং। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্লাসেন ও মিলার উইকেটে থিতু হন। ধীরে ধীরে হাত খুলতেও শুরু করেন দুজনেই। একপর্যায়ে ক্লাসেন ৪৪ বলে ৪৬ রানে তাসকিনের বলে সাজঘরে ফেরেন। আর মিলারকে ২৯ রানে আউট করেন রিশাদ হোসেন। সবশেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান তুলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশের হয়ে তানজিম হাসান সাকিব নিয়েছেন তিন উইকেট। এ ছাড়া তাসকিন দুটি এবং রিশাদ হোসেন পেয়েছেন এক উইকেট।


এএফ/০১