ফের ইউরোপের রাজত্ব স্পেনের

খেলা ডেস্ক


জুলাই ১৫, ২০২৪
০২:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৫, ২০২৪
০২:০১ পূর্বাহ্ন



ফের ইউরোপের রাজত্ব স্পেনের


হাই ভোল্টেজ ফাইনাল। ইউরোপের রাজত্ব পেতে মুখোমুখি স্পেন আর ইংল্যান্ড। কিন্তু তারপরও প্রথমার্ধ কেন জানি জমে উঠছিল না। গতিহীন, ঢিমেতালের ফুটবল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। যেন সব নাটকীয়তা, রূদ্বশ্বাস মুহূর্তগুলো জমিয়ে শেষ অর্ধের জন্য। 

বিরতির পর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই স্পেনের দাপট। আক্রমণের ঝড় তুলে এগিয়ে গেলে। ঝড়ের মাঝেই ইংল্যান্ডের আশা হয়ে এলেন কোল পালমার, বদলি নেমেই দুর্দান্ত গোল, তাতে ঘুরে দাঁড়াল ইংল্যান্ড। যেমনটা তারা আসরজুড়ে করে এসেছে। তবে এই স্পেন তো অন্য ধাঁচে গড়া। খেই না হারিয়ে, চাপ ধরে রেখে শেষ দিকে আরেকবার জালে বল জড়াল তারা। ১২ বছর পর আবার মাথায় তুলল ইউরোপ সেরার মুকুট।

গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৪৭ মিনিটে নিকো উইলিয়ামসের গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। ৭৩ মিনিটে বদলী কোল পালমারের গোলে ইংল্যান্ড সমতা ফেরালেও শেষ রক্ষা হয়নি। ৮৬ মিনিটে আরেক বদলী খেলোয়াড় ওয়ারজাবালের গোলে ফাইনাল জিতে নেয় স্পেন। 

এতদিন সর্বোচ্চ ইউরো জয়ের রেকর্ড ছিল যৌথভাবে স্পেন ও জার্মানির। গতিময় ও নান্দনিক ফুটবলের পসরা মেলে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেটা নিজের করে নিল স্প্যানিশরা।

স্প্যানিশদের ছয়ে-ছয় জয়ের তুঙ্গস্পর্শী আত্মবিশ্বাসের ওপর শিরোপা লড়াইয়ের স্নায়ুচাপ যেন চেপে বসে। আর এই চাপের কারণেই কি-না, শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের চেষ্টা করলেও প্রতিপক্ষের সীমানায় তেমন ধারাল হতে পারছিলেন না ইয়ামাল-উইলিয়ামসরা।

তুলনায় ইংল্যান্ড শুরুতে ছিল আরও সতর্ক। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে মূলত পাল্টা আক্রমণের চেষ্টায় ছিল তারা, যদিও তারাও পারছিল না উল্লেখযোগ্য কিছু করতে। তাইতো, প্রথমার্ধে দুই গোলরক্ষকের কাউকেই কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি।

আসর জুড়ে দ্যুতি ছড়ানো নিকো উইলিয়ামস দশম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন, তবে দারুণ এক স্লাইড ট্যাকলে তাকে রুখে দেন ডিফেন্ডার জন স্টোন্স। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সতীর্থের ফ্রি কিকে ছয় গজ বক্সে ফাঁকায় বল পান ফিল ফোডেন; কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মাঝমাঠের ভরসা রদ্রিকে বসিয়ে আরেক মিডফিল্ডার মার্তিন জুবিমেন্দিকে নামান স্পেন কোচ। এবং দ্বিতীয় মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় তারা।

গোলটির সঙ্গে জড়িয়ে পুরো আসরে ক্রমেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ইয়ামাল-উইলিয়ামস জুটি। ডান উইং ধরে শাণানো আক্রমণে সতীর্থের বল পেয়ে একটু এগিয়ে বক্সে অন্য পাশে উইলিয়ামসকে খুঁজে নেন ইয়ামাল। আর বিনা বাধায় দারুণ কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন আথলেতিক বিলবাও ফরোয়ার্ড।

পরের মিনিটে আবার ইংলিশদের রক্ষণ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এবার উইলিয়ামস বক্সে খুঁজে নেন দানি ওলমোকে। তিনিও ছিলেন অরক্ষিত; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশ করেন লাইপজিগ ফরোয়ার্ড।

খানিক পর সঙ্গের ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মোরাতা, বাধা দিতে এগিয়ে আসেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। স্পেন অধিনায়কের শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও ঠিকানা খুঁজে পায়নি।

শুরু থেকে নিজের হয়ে ছিলেন হ্যারি কেইন। তাই আক্রমণের ধার বাড়াতে তাকে বসিয়ে সেমি-ফাইনালের জয়ের নায়ক অলি ওয়াটকিন্সকে নামান ইংল্যান্ড কোচ।

৬৬তম মিনিটে গোল পেতে পারতেন ইয়ামাল। ওলমোর পাস প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকতে গিয়ে একটু গড়মিল হয়ে যায়। তবে বল হারাননি তিনি। প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে শট নেন, ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন পিকফোর্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণে আধিপত্য, সবই ছিল স্পেনের দখলে। তবে আসরে বারবার দেখা গেছে, মন ভরানো ফুটবল না খেললেও প্রয়োজনের সময় ঠিকই গোল আদায় করে নিয়েছে তারা।

ঠিক সেভাবেই ৭৩তম মিনিটে দারুণ এক গোলে সমতা টানেন তিন মিনিট আগেই বদলি নামা পালমার। বুকায়ো সাকার পাস বক্সে ধরে শট নেওয়ার মতো জায়গা না পেয়ে ব্যাকপাস করেন বেলিংহ্যাম, আর ২২ গজ দূর থেকে জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন চেলসি ফরোয়ার্ড।

সেমি-ফাইনালে শেষ দিকে বদলি নেমে পালমারের অ্যাসিস্টেই গোল করে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন ওয়াটকিন্স।

৮২তম মিনিটে দলকে ফের এগিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইয়ামাল। তার জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। বেশিক্ষণ অবশ্য অপেক্ষায় থাকতে হয়নি স্পেনকে।

চার মিনিট পর বাঁ দিক থেকে ছয় গজ বক্সের মুখে দারুণ এক পাস বাড়ান মার্ক কুকুরেইয়া। আর ডান পায়ের স্লাইড শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন মোরাতার বদলি নামা ওইয়ারসাবাল।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। ডেকলান রাইসের হেড গোলরক্ষক উনাই সিমন ঝাঁপিয়ে ফেরানোর পর, ফিরতি শট নেন মার্ক গেয়ি; কিন্তু গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ওলমো। সুযোগ ছিল তারপরও, কিন্তু রাইসের পরের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।

ইংলিশদের আরেকটি শিরোপা জয়ের অপেক্ষাও তাতে শেষ হলো না। সেই ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে আরেকটি ট্রফির অপেক্ষায় থাকা দলটি টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর রানার্সআপ হলো।



এএফ/০১