সিলেট মিরর ডেস্ক
                        আগস্ট ২২, ২০২৪
                        
                        ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
                        	
                        আপডেট : আগস্ট ২২, ২০২৪
                        
                        ১০:৫৫ অপরাহ্ন
                             	
                        
            
    ‘বন্দি’ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মুক্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৪৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি। এ সময় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ভিড় করেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে বাসায় নেওয়া হয়। তবে এবার হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় খালেদা জিয়ার চোখেমুখে ছিল স্বস্তির ছাপ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট নির্বাহী আদেশে দণ্ডাদেশ মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই মুক্তির খবরও তিনি জানেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে সাড়ে ৬ বছর পর এখন পুরোপুরি মুক্ত পরিবেশে থাকছেন খালেদা জিয়া। ৮ জুলাই গভীর রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
হাসপাতালের ছাড়পত্র দেওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় পাজারো জিপে চড়ে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন। রাত সাড়ে ৮টায় বাসায় পৌঁছায় তার পাজারো জিপ। এ সময় সড়কের দু-ধারে হাজারও নেতাকর্মী করতালি ও মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িকে কর্ডন করে গুলশানের বাসায় নিয়ে যান। বাসায় পৌঁছানোর পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন। 
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাসায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে থাকবেন খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য উনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই কাজও চলছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। ২ বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে দুই মামলার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ৬ মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল তৎকালীন সরকার। বিএনপি সব সময়ই দাবি করে আসছে, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গুলশানের বাসায় ও হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। শর্তের কারণে তিনি কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। শুধু দুটি ঈদে দলের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট নির্বাহী আদেশে দণ্ডাদেশ মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পুলিশি নিরাপত্তাসহ তাকে তার পাসপোর্টও দেওয়া হয়। 
নেতারা জানান, আগে বাসায় থাকলেও খালেদা জিয়া বন্দি ছিলেন। এখন থেকে তিনি পুরোপুরি মুক্ত। তারা আশা করেন, খালেদা জিয়া একটু সুস্থবোধ করলে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। 
এর আগে অসুস্থ খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জুলাই গুলশানের বাসায় ফেরেন। ২৫ জুন একই হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্র পেসমেকার বসানো হয়। এছাড়া সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর  হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। একটিতে রিং পরানো হয়। 
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। এর আগেও ২ মে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুদিন চিকিৎসা দিয়েছিলেন। তারও আগে গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন ৫ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় ৫ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।
এএফ/০৪