সিলেট মিরর ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
১১:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪
১১:২৫ অপরাহ্ন
মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতির বিষয়কে কটাক্ষ করে একটি গোষ্ঠীর নানামুখী অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিবৃতিতে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীত নিয়ে যে কোনো অপপ্রচার এবং ঔদ্ধত্য ও হীন তৎপরতা বন্ধেরও আহ্বান জানান। আর তা না হলে এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি যে, অসৎ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত জনরায়ে প্রতিষ্ঠিত বিষয়সমূহ, এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখাতে পরিকল্পিত প্রচার শুরু করেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে জামাতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকা ইত্যাদির কথাই বুঝিয়েছেন। তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই বোঝাতে চেয়েছেন, তা আরও পরিষ্কার হলো গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে।
আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একইসাথে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয়, যেখানে সেখানে যা খুশি তাই বলা যায়। যে উদ্দ্যেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সকলের মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সর্বস্তরের বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, বর্ণ, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবনপণ লড়াইয়ে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ, নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের অগণিত ব্যক্তি ও পরিবার।
সেই ইতিহাস এই দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাবার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়। আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা জীবনপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে শারীরিক পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যে যুদ্ধ করেছেন, জাতীয় সংগীত ছিল তাদের প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস। তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লক্ষ শহীদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘কোনো মহল যদি ছাত্র-জনতার বিজয়কে ৭১-এর বিজয় দিবস কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো অপচেষ্টা চালায় তাকে অতি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও তার গৌরবময় বিজয়ের দুশমন বলেই চিহ্নিত করতে হবে। বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীতসহ যাবতীয় বিষয়ে সতর্ক, সজাগ ও ঐকবদ্ধ থাকতেও আহবান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন- ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করি'র সমন্বয়ক খুশি কবীর, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি উপাচার্য পারভীন হাসান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মো. হারন-অর-রশিদ, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, লেখক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক মাহা মির্জা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক ড. সাদাফ নুর প্রমুখ।
এএফ/০৯