মৌলিক সংস্কারগুলো করে দ্রুত নির্বাচন দিন: সিলেটে আহমদ আজম

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
০৮:২০ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
০৮:২০ অপরাহ্ন



মৌলিক সংস্কারগুলো করে দ্রুত নির্বাচন দিন: সিলেটে আহমদ আজম


অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের রুটম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেছেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটার পর একটা সংস্কার চলতেই থাকবে। তাই মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের রুটম্যাপ ঘোষণা করুন।’ ১৫ বছর বঞ্চিত থাকা মানুষ ভোট দিতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ মুখিয়ে আছে যে কখন ভোট হবে। ১৫টি বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দিতে চায়।’

বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট বিভাগীয় র‌্যালি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভাইস আহমদ আজম খান বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কারণ গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বজনীন মূল্যবোধ যা জনগণের স্বাধীন ভাব মতপ্রকাশ ও বাধাহীন চিন্তা প্রকাশের স্বীকৃতি প্রদান করে। আমরা এ ধরনের একটি নিরাপদ, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে।’

সিলেটের কৃতি সন্তান এম সাইফুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছি। সিলেটের সাহসী বীর পুরুষ এম ইলিয়াস আলীসহ ৫২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী গুম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবিলম্বে আমরা তাদের সন্ধান চাই।’

গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের সফলতাকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘আমরা বলেছি, জনগণ মুখিয়ে আছে যে কখন ভোট হবে। ১৫টি বছর ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দিতে চায়। তাই ড. ইউনূসের সরকারকে বলব আপনি এখন প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে নির্বাচনের রুটম্যাপ করুন।’

দ্রুত নির্বাচনের তাগাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে একটা পর একটা চলতেই থাকবে এই সংস্কার। যত দিন যাবে নতুন নতুন ইস্যু আসবে, আর সেই সংষ্কার আমরা করব। তাই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে আপনার কাছে চাওয়া, দ্রুত মৌলিক সংষ্কার শেষ করে আপনি নির্বাচনের রুটম্যাপ ঘোষণা করুন। আমরা আপনার সেই রুটম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষকে নির্বাচনী কাফেলায় একত্রিত করব।’

ফ্যাসিস্ট আর কোনো সরকারকে এদেশের মানুষ চায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে আপনার কাছে অনুরোধ, আর রক্তের হুলিখেলা নয়। আর কোনো ফ্যাসিবাদকে আমরা ফেরত আসতে দেবো না। আগামীদিনে আমরা গণতন্ত্রের বাংলাদেশ দেখতে চাই। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেখতে চাই।’

ফ্যাসিস্ট হাসনার পতনের আন্দোলনে বিলেতে থেকে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে তারেক রহমান জাগিয়ে তুলেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যার নেতৃত্বে আমরা ১৫টি বছর বছর বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আন্দোলন করেছি, ইলিয়াস আলীসহ ৫২২ জন গুম হয়েছেন, যার নেতৃত্বে আন্দোলন করতে গিয়ে মাথানত না করে ১০ হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছেন, ১০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মী নিঃস্ব হয়েও রাজপথ ছাড়েনি। সেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা এবং বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের যৌথ আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এই আত্মত্যাগে শেষ ৩৬ দিনে বিএনপিসহ, ছাত্র জনতার প্রায় সাড়ে ৮০০ মানুষ শাহাদাত বরণ করেছেন। যার মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী ৪২২ জন। আমি পুরো সকল শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গৌছ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদির লোনা, চেয়ারপারনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার, কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিব, দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার আহমদ চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন প্রমুখ। 

সিলেট বিভাগ বিএনপির সমাবেশ ও র‌্যালী আয়োজক কমিটির সমম্বয়কের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর কোটি কোটি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। ভুয়া ভোটের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। দেশের কোটি কোটি ভোটার অর্থবহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। দেশের কয়েক প্রজন্ম গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা ও প্রয়োগ ছাড়াই একটি ভীতিকর ও কর্তৃত্ববাদী পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। অপশাসনে সংকুচিত স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা তথা মানবিক ও মানসিক বিকাশ ও প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে। তরুণদের উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে নস্যাৎ করা হয়েছে। সবল ও শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য আমাদের এখনও অনেক দুর এগোতে হবে। কারণ এখনও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের দুর্বলতা বিদ্যমান।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রূশদী লুনা বলেন, ‘বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের এমন একটি শাসন ব্যবস্থায় উপনীত হতে হবে যেখানে জনগণ সরাসরি শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে। জনগণের মতামতই হয় সেই সরকারের পরিচালনার ভিত্তি। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমরা দুঃসময় কাটিয়ে উঠে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার সার্বিক প্রচেষ্টায় আমাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’ তিনি অবিলম্বে সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা জননেতা এম ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমকৃত নেতাকর্মীদের ফিরে দেওয়ার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সাম্য হরণ করে এক সর্বনাশা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম ছিল। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপোষহীন যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছিল মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার বর্বরোচিত অত্যাচার। দেশবাসী এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক রক্তস্নাত আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এখন কিছুটা মুক্তির নি:শ্বাস নিতে পারছে।’


সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘গণতন্ত্র সর্বজনীন যা, কোন দেশ বা অঞ্চলের অন্তর্গত নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা সমুন্নত থাকে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মানুষকে কৃতদাসে পরিণত করা যায় না। একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-সমাজেই কেবলমাত্র মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়। জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নির্ধারণ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাসহ জীবনের সকল দিকগুলোর স্বত:স্ফূর্ত পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। সারাবিশ্বে বহুমত ও পথের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহকে ভূলুণ্ঠিত করে বিভিন্ন দেশে এখনও একদলীয় দুঃশাসনের কালো থাবা বিরাজমান। তিনি আজ পর্যন্ত দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। আত্মদানকারী শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের সমবেদনা।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় র‌্যালি পূর্বেক সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন  সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, হাজী মুজিব, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুর, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ওলামাদল সিলেট জেলার আহবায়ক মাওলানা নুরুল হক। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত কামনা, বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু, শহীদ জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা এবং বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের মাগফেরাত, আহতদের দ্রুত সুস্থতাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সালেহ আহমদ।

পরে নগরে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে নগরে র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠ থেকে শুরু হয়ে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রেজিস্টারী মাঠে গিয়ে শেষ হয়।


এএফ/০৪