কোম্পানীগঞ্জে ‘ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক’ পরিচয়ে গভীর রাতে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৯

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
০৯:১৫ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
০৯:৩৯ অপরাহ্ন



কোম্পানীগঞ্জে ‘ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক’ পরিচয়ে গভীর রাতে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৯


সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে গভীর রাতে বালু ও পাথর বহনকারীদের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ৯ জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা। গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত দুইটার দিকে উপজেলার দয়ারবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও বুড়দেও গ্রামের রশিদ আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগের কর্মী আবু সাঈদ রবিন (২২), একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহজাহান আহমদ (২৯), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর পাড়ুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে আরিফ হাসান জুবায়ের (২৭), টুকেরবাজারের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. রাজন মিয়া (২৫), পাড়ুয়া শাকেরা এলাকার আব্দুল বাছেদের ছেলে দিদার হোসেন (২৫), কাঠালবাড়ী গ্রামের বাহার মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (২৫), শাহ আরফিনের মো. হাইদুল ইসলামের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (২৬), বটেরতল গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে নাসির মিয়া (২৫), বাহাদুরপুর গ্রামের মো. কালু ভূইয়ার ছেলে সোলায়মান (২৭)। 

আটককৃতদের মধ্যে আবু সাঈদ রবিন, শাহজাহান আহমদ ও আরিফ হাসান জুবায়ের কোম্পানীগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসাবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছিলেন। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সমন্বয়ক পরিচয়ে দুর্নীতি মুক্ত সরকারি সেবা নিশ্চিত সভা করতেও দেখা গেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে এলাকাবাসী জানতে পারেন স্থানীয় বারকি নৌকার মাঝি ও বালু পাথর উত্তোলন শ্রমিকদের কাছে চাঁদা চাচ্ছেন সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন। তারা বলছেন, চাঁদার বিনিময়ে তারা সাদা পাথর ও ধলাই নদী হতে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দেবেন। এ খবরে স্থানীয় শতাধিক লোক রাত দেড়টার দিকে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে তাদের ঘেরাও করেন। এসময় সমন্বয়ক পরিচয় দানকারীরা উত্তেজিত হয়ে তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যেতে বলে। বিষয়টি স্থানীয় স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের অবগত করে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীদের আটক করে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। তবে ৯ জনকে আটক করা গেলেও ২ জন পালিয়ে যান।

পলাতকরা হলেন, নয়াগাঙ্গেরপাড় গ্রামের ইলিয়াছুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান মামুন (২৭) ও অপরজন লামাগ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে সোহেল আহমদ রানা (২৯)।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ১১ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোম্পানীগঞ্জের ছাত্রনেতা নূর আহমদ (২৫) বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগে আজ (বৃহস্পতিবার) থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালত প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে কোম্পানীগঞ্জে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগে ছাত্র সমন্বয়ক দাবি করে সিলেট জেলা ছাত্রদলের নেতা মইনুল ইসলাম নামের একজনের নেতৃত্বে গরু ছিনতাই ও চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী তাদের আটক করে। 

তারও আগে উপজেলার কাটাখাল এলাকায় এক ব্যবসায়ীর টাকা ডাকাতির সময় স্থানীয় দক্ষিণ বুরদেও গ্রামের কামরুল নামের একজনকে আটক করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় ওয়াসিম ও জুনায়েদ নামের আরও দু'জনের নামে মামলা হয়। এরা সবাই নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিতেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। বর্তমানে কামরুল কারাগারে রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, গত কয়েকদিন আগে গভীর রাতে মহাসড়ক থেকে গাড়ি আটক করে চাঁদা দাবি করে ছাত্র সমন্বয়ক নামে কয়েকজন, পরে তার কাছে টাকা না থাকায় বিকাশে টাকা এনে তাদেরকে দিয়ে তারপর তাকে ছেড়ে দেয় তারা। 

কোম্পানীগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত মোহাম্মদ শিহাব আহমদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলাম। আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার পতনের পর থেকেই কোম্পানীগঞ্জে সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেকেই চাঁদাবাজি, মামলাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে যা খুবই লজ্জাজনক।’



এএফ/০৪