অবহেলিত সাদাপাথর, আট বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি

কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ


সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪
০৪:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
০৫:৪২ অপরাহ্ন



অবহেলিত সাদাপাথর, আট বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি
# সাদাপাথরের উৎসমুখ খনন না করায় সৌন্দর্য কমেছে # ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সচেতনতা না থাকায় বেড়েছে পর্যটকের মৃত্যু


প্রকৃতিকন্যা সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। এ পর্যটনকেন্দ্রে অপার সম্ভাবনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশনের সুনজর না লাগায় অযত্ন ও অবহেলায় ধুঁকছে। স্থানীয়ভাবে ৮ আগে ২০১৬ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় সিলেট কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি নামক সাদাপাথর এলাকাটি। 

ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড়ের পাদদেশে ধলাই নদীর উৎসমুখে ছোটবড় সাদা সাদা পাথরের স্তূপের কারণে স্থানীয়রা এলাকাটির নাম দেয় সাদাপাথর। গত ৮ বছরেও প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো উন্নয়নের 

ছোঁয়া লাগেনি এখানে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে আসা সাদাপাথরের উৎসমুখ খনন না হওয়ায় বেড়েছে পাথরের স্তূপ। দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে নদী। যার ফলে সৌন্দর্য কমেছে এ পর্যটনকেন্দ্রের। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর হয়েছে এ পর্যটন কেন্দ্র থেকে পর্যটকদের আকর্ষণের বড় বড় সাদা পাথরগুলো লুটপাট হওয়াতে ও কিছু স্থাপনা ভাঙচুর করাতে সৌন্দর্যে কিছুটা ভাঁটা পড়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় এ পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প ও সচেতনতা না থাকায় প্রতি বছরই পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। 

অপার সম্ভাবনাময় সাদাপাথর পর্যটনে প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশনের অবহেলায় ক্ষিপ্ত ভ্রমণপিপাসু ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবীরা। 

কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি মো. শরীফ আহমদ সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘সিলেটের যতগুলো পর্যটনকেন্দ্র আছে, তার মধ্যে সিলেট শহর থেকে খুবই কাছে সাদাপাথর। যার ফলে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা এখানেই বেশি আসলেও এ পর্যাটনকেন্দ্রে প্রকৃতির তৈরি দৃশ্যগুলোর বাইরে আর কিছুই নেই। এমনি এখানে পরিকল্পিত যাত্রী ছাউনি, গণশৌচাগার, নৌকাঘাট, পার্কিং জোন পর্যন্ত নেই। গত কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা নামক একটি উদ্যোগ নিয়ে ডিজাইন ও জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তারপর গেল কয়েক বছরে মহাপরিকল্পনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ১৪০ ফিট বাউন্ডারি ওয়ালের দৃশ্য ছাড়া উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।’ দীর্ঘ এত বছরেও উন্নয়ন না হওয়ার জন্য প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশনের কাজের নামে ধীরগতি ও অবহেলাকে দায়ী করেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা শরীফ আহমদ। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাদাপাথরে সপরিবারে ভ্রমণে আসা মাওলানা নুরুল আমিন সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন পর্যটনস্পটে আমি ঘুরেছি। অন্য পর্যটন স্পটের তুলনায় এখানে সুযোগ সুবিধা বলতে কিছুই নেই। বিশেষ করে গণশৌচাগার ও পর্যটক ছাউনি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের মতো পর্যটকদের।’

নৌকার মাঝি মনির হোসেন সিলেট মিরর-কে জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ পাথর ও বালু আসে। প্রতিবছরই ভালোর স্তূপ বাড়ছে। যার ফলে ধলাই নদীতে পানিপ্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণ নদী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে নদীর পাড়ের বিজিবি ক্যাম্প, মসজিদ ও অনেক কিছু ভেঙে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে নৌযান চলাচলে খুবই সমস্যা হয়। পর্যটনের এ নদীর উৎসমুখ থেকে নৌকাঘাট পর্যন্ত খনন করা হলে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নৌকা চলাচল যেমন সহজ হবে, তেমনিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যটকেরা স্পটে পৌঁছাতে পারবেন। 


ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সফাত উল্লাহ সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে সরকারিভাবে অনেক কিছু নির্মাণের প্রয়োজন ছিল কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। পর্যটন কেন্দ্রের শুরু থেকেই পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব অর্থায়নে নৌকাঘাটের দুটি সিঁড়ি, গণশৌচাগার ও পার্কিংসহ অনেক কিছুই করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে কয়েক বছর আগে একটি গণশৌচাগার করা হয়েছিল কিন্তু বন্যার কারণে সেটি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে এটি নির্মাণ করা হয়নি। লুসিকান্ত হাজং স্যার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকাকালীন দৃষ্টিনন্দন একটি কাজ করেছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা তা ভেঙে ফেলেছে। কাজী ইমদাদুল হক জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন পর্যটনের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাউন্ডারি ছাড়া দৃশ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি।’ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে অবহেলিত এ পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে দ্রুত কাজ করার। 

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আদনান সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবে পর্যটনকেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ থাকলে আরও ভালো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা করব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা সিলেট মিরর-কে বলেন, ‘সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ করতে আগ্রহী উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হচ্ছে। পর্যটনে মহাপরিকল্পনা বাস্তববায়নের জন্য কিছু কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সেগুলোকে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং পাথর লুটপাট করা হয়েছে। তবে দ্রুত সয়মের মধ্যে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন, নদী খননসহ বিভিন্ন কাজ করা হবে।’



এএফ/০২