এমন সমাজ চাই যেখানে মসজিদের মতো মন্দিরেও পাহারা লাগবে না: সিলেটে জামায়াতের আমীর

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১২, ২০২৪
০৮:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২৪
০৮:১৭ অপরাহ্ন



এমন সমাজ চাই যেখানে মসজিদের মতো মন্দিরেও পাহারা লাগবে না: সিলেটে জামায়াতের আমীর


লগি বৈঠার তাণ্ডবে মানুষ হত্যার উল্লাসে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল মন্তব্য করে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সেই বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আবার পথে ফিরেছে।’ সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু ভেদাভেদ চান না জানিয়ে বলেন, ‘এমন সমাজ গঠন করতে চাই যেখানে মসজিদের মতো মন্দিরেও পাহারার প্রয়োজন হবে না।’

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা কনভেনশন হলে জামায়েতে ইসলাম সিলেট মহানগর আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া সুধী সমাবেশ চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।

দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনওয়ার হোসাইন খান, জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ক্রেডিট কোনো দলের নয়, এর ক্রেডিট শুধু ছাত্র-জনতার। ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। যদিও এর পেছনে আমাদের অনেক শহীদের ত্যাগ রয়েছে।’ বিডিআর বিদ্রোহে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয় মন্তব্য করে বলেন, ‘২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যে আন্দোলনের শুরু হয়েছিল, ৫ আগস্ট হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্যে দিয়ে সে আন্দোলন শেষ হয়েছে।’

পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে একটি সাময়িক পরিবর্তন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একে স্থায়ী রূপ দিতে প্রয়োজন সৎ লোকের শাসন ও আল্লাহর আইন। যেখানে দল-মতের উর্ধ্বে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে।’ কাজ দিয়ে দেশবাসীর ভালোবাসা অর্জন করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রকৃত ভালোবাসা অর্জন করতে চাই। 

সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু ভেদাভেদ চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু ভেদাভেদ চাই না। এমন সমাজ গঠন করতে চাই যেখানে মসজিদের মতো মন্দিরেও পাহারার প্রয়োজন হবে না। কেউ আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের রুখে দিতে হবে। দেশকে ভালবাসতে হলে প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে।’

জামায়াতের আমীর বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তান্ডবে মানুষ হত্যার উল্লাসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেই বাংলাদেশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আবার পথে ফিরেছে। আমাদের ছাত্র ও যুবসমাজ সেই অসাধ্য সাধন করেছে। আমরা দেখেছি নিজের বড় কোন সন্তান না থাকায় একজন মা দেড় বছরের কোলের শিশুকে নিয়ে রাজপথে নেমেছেন। ৭০ বছরের বৃদ্ধও শাহাদাতের তামান্না নিয়ে রাজপথে ছিলেন। যে জাতির দেড় বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধরা রাজপথে নামতে পারেন সেই জাতিকে আর দমিয়ে রাখা যাবেনা।’

সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মহানগরীর কয়েক হাজার কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মাজেদ মাহফুজের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতের সিলেট অঞ্চল টীম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আলিম হোসেন খান, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী,  সাবেক ছাত্রশিবির নেতা সুলতান আহমদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ প্রমূখ।

সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘দেড় যুগ পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গঠনে আমরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে চাই। সুন্দর ও আকর্ষণীয় চরিত্রের মাধ্যমে আমরা জাতির প্রত্যাশাপূরণে যোগ্য নেতৃত্ব গঠন করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু মুখে নয়, আমাদেরকে চরিত্র ও ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গনজাগরণ তৈরী হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই পুণ্যভুমি সিলেটের অলি-গলিতে, পাড়া-মহল্লায় দাওয়াতী কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে একটি সুশৃঙ্খল মানবিক বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস দেখতে পাচ্ছি। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টরা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তারা পরাজয় স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে সেই সব ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক জনতা সফল হতে দিবেনা। সর্বস্তরের শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে অতীতে জামায়াতকে নির্মুল করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতেও কেউ জামায়াতক নির্মুল করতে পারবেনা। ইনশাআল্লাহ।’

সম্মেলনে একক ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রাসেদুল হাসান রাসেল। সম্মিলিত কণ্ঠে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন সিলেট সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ।


এএফ/১৩