জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১৭ কবি লেখকের গল্পে সিলেটের সালেহ আহমদ খসরু

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ২০, ২০২৪
০৫:০৫ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২১, ২০২৪
০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন



জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ১৭ কবি লেখকের গল্পে সিলেটের সালেহ আহমদ খসরু


জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্নস্থানে আহত হয়েছেন এমন ১৭ জন কবি ও লেখকের গল্প শুনতে কালের ধ্বনি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে দেশের ১৭ কবি ও লেখকের মধ্যে সিলেট থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন কবি ও বাচিক শিল্পী সালেহ আহমদ খসরু। সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সেখানে তিনি এমন আন্দোলনে নিজের জড়িয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণার উৎসের কথাও জানান।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ।

অনুষ্ঠানে  অতিথি বক্তা ছিলেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম, চিকিৎসক সাকিরা পারভিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও ছাত্রলীগের নির্যাতনে বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ। আলোচনায় আরও অংশ নেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কাজল রশীদ, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন , আমিরুল মোমেনীন প্রমূখ।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এমন ১৭ জন কবি ও লেখক তাদের আন্দোলনে জড়িয়ে যাওয়া, সেই সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি তুলে ধরেন। কবি ও লেখকদের মধ্যে সবার শেষে মঞ্চে আসেন সিলেটের সালেহ আহমদ খসরু।

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আপ্লুত লেখক সালেহ আহমদ খসরু বলেন, ‘অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এখানে উপস্থিত। আপনাকে আমি ভীষণ সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আপনার ভূমিকা আমরা গোটা জাতি দেখেছি।’


ড. রীয়াজকে উদ্দেশ্য করে সালেহ খসরু বলেন, ‘আপনার একজন প্রিয় মানুষ ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ খ্যাত মুশফিকুল ফজল আনসারী। যখন কোনো মুখপাত্র ইয়েস মুশফিক বলতেন, বিশ্বাস করুন, ওই শব্দটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করতো। তখন ভাবতাম আমাকে লড়তেই করতেই হবে। কিন্তু ৬২ বছর বয়সে আর কতটুকু লড়াই করা যায়? আমরা মাঠে ছিলাম, আমি গুলি খেয়েছি, তার চেয়ে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে?’

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে ‘ভয়ের সংস্কৃতি কেটে গেছে। প্রশ্ন করার মতো মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । গণ–অভ্যুত্থানের যে লক্ষ্য ছিল, তা এখন বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বিস্ময়কর অর্জন সম্ভব হয়েছে, তা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করে আমাদের হাতে এই অর্জনকে রক্ষার জিম্মাদারি দিয়েছে। আসুন, সবাই নিজ অবস্থান থেকে এই অর্জন ধরে রাখতে ইতিবাচকভাবে কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেকের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে, হতাশা এসেছে। এটি আসতেই পারে। সে জন্য আমাদের বেশি বেশি প্রশ্ন করতে হবে। আলী রীয়াজ বলেন, বিগত স্বৈরশাসক, চারটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমত, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয়ত, তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজেদের পছন্দমতো একটি ‘বয়ান’ তৈরি করেছিল এবং স্তাবক লেখক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবীদের দিয়ে সেই বয়ানের পক্ষে অনবরত সাফাই গাইয়ে একটি প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। তৃতীয়ত, গণমাধ্যমগুলোতে নানামুখী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিলো, যাতে মিডিয়ায় শাসকের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটে। অবশ্য সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন গণমাধ্যমের অনেক মালিক! তারা এক দফা অগ্রসর হয়ে স্বৈরাচারের সঙ্গে রয়েছেন প্রমাণ করে অনৈতিকভাবে ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করেছেন। চতুর্থ বিষয় হলো- স্বৈরশাসক দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে অনেক দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।  এ ক্ষেত্রে সরাসরি ভারত ও প্রচ্ছন্নভাবে চীন শেষ অবধি পতিত স্বৈরশাসনের পক্ষেই ছিলো। আলী রীয়াজ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনকে বৃথা যেতে দেয়া যাবে না, এটাই হোক আজকে আমাদের অঙ্গীকার। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, তারা চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনোভাবেই যেনো স্বৈরচারের দোসররা ফিরতে না পারে। এ জন্য আমাদের স্বৈরশাসনের উৎসমূলে সংস্কার করতে হবে। ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেই হবে।’

এর আগে অনুষ্ঠানের প্রথমপর্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী আহত কবি ও লেখকরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এই পর্বে বিভিন্ন বয়সের ১৭ জন লেখক ও কবি বক্তব্য রাখেন। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ছোট বই প্রকাশ করেছে কালের ধ্বনি। অনুষ্ঠানে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

পরে ছিল অভ্যুত্থান-পরবর্তী অবশ্য করণীয় বিষয়ে আলোচনা। কালের ধ্বনির সম্পাদক কবি ইমরান মাহফুজ ও লেখক জুবায়ের ইবনে কামালের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের  আফিফ, শাহ হুজাইফা ফেরদৌস, হাসান ইমাম, মাসুক নুর, শেরিফ ফারুকী, হাসনাত আবদুল্লাহ, কাদের মাজহার, ইব্রাহিম নিরব, তুহিন খান, আল নাহিয়ান, মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ, মোরশেদ আলম, চঞ্চল বাশার, আক্তার জামান, হানিফ মোল্লা। 

সংগীত পরিবেশন করেন রিয়াজুল ইসলাম ও পার্শা মাহজাবিন। 



এএফ/০৩