বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেটে আন্দোলনে চা শ্রমিকরা, দুই দিনের আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ২৮, ২০২৪
০৫:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৮, ২০২৪
০৫:৪০ পূর্বাহ্ন



বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেটে আন্দোলনে চা শ্রমিকরা, দুই দিনের আল্টিমেটাম


ছয় সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না চা শ্রমিকরা। বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে তাই এবার সিলেটের বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিকরা। মজুরি পরিশোধে দুই দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে এ দুইদিন বাগানে কর্মবিরতিতে থাকবেন তারা। 

রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) মালিকানাধীন বাগানগুলোর চা শ্রমিকরা গত ৬ সপ্তাহ ধরে তাদের মজুরি পাচ্ছেন না। এতে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বাগানে শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এতে করে বিগত সাত দিন ধরে অচলবস্থা চলছে সরকারি মালিকানাধীন প্রায় ১৮টি চা বাগানে। এসব বাগানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা। পরে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকরা। এ সময়ের মধ্যে বকেয়া মজুরি প্রদান করা না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা। তবে আগামী দুদিন আন্দোলন বন্ধ থাকলেও কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান শ্রমিকরা।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গত দুর্গাপূজার আগে থেকেই তাদের মজুরি ও বোনাসের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুজার সময়ে বোনাস প্রদান করলেও দেড় মাসের মজুরি  বকেয়া রয়ে গেছে।’

সিলেটের দলদলি চা বাগানের শ্রমিক সজিব মুন্ডা বলেন, ‘যে টাকা মজুরি পাই না দিয়ে সংসারই চলে না। তার উপর দেড় মাস ধরে মজুরি বন্ধ। আমরা খেয়ে বাঁচবো কি করে?’ তিনি বলেন, ‘দোকানে বাকির টাকার অংক কেবল বড় হচ্ছে। এখন দোকানিও বাকি দিতে চায় না। ফলে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।’

রবিবারের কর্মসূচি থেকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া প্রসঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘আমি নিজেও এনটিসির মালিকানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক। দেড় মাস ধরে আমাদের মজুরি বকেয়া পড়ে আছে। ফলে লাখের বেশি শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কে সরকারে আসলো বা গেল তা নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের কিছু আসে যায় না। আমরা কোন রাজনীতিতে নেই। আমরা কেবল আমাদের মজুরি চাই।’

লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহিদ বলেন, ‘শ্রমিকদের মতো আমরা নিজেরাও সমস্যায় আছি। আমাদেরও বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তবে শুনেছি শিগগিরিই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

ন্যাশনাল টি কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

বিগত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ন্যাশনাল টি কোম্পানির তৎকালীন সব পরিচালক পদত্যাগ করেন। এতে কোম্পানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বন্ধ হয়ে পড়ে কোম্পানীর সব বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও মজুরি। এতে সবচেয়ে বিপাকে বাগান শ্রমিকরা। ১৭৮ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা ৬ সপ্তাহ ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।



এএফ/০১