সিলেট মিরর ডেস্ক
নভেম্বর ০১, ২০২৪
০২:০৫ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ০১, ২০২৪
০২:০৫ অপরাহ্ন
এক যুগ পর বাড়ল সিলেটসহ দেশের সব সার্কিট হাউজের ভাড়া। বুধবার (৩০ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সারাদেশে সার্কিট হাউসের নতুন ভাড়া ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত আবাসন সুবিধা সার্কিট হাউজের ভাড়া ১১৪ শতাংশ বাড়িয়েছে অন্তবর্তী সরকার। ২০১২ সালের পর এটি প্রথমবারের মতো ভাড়া সংশোধন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সারাদেশে সার্কিট হাউজের নতুন ভাড়া ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদেরকে এই হার কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা ন্যূনতম ১৫০ টাকায় এক শয্যার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম ব্যবহার করতে পারবেন, যা পূর্বে ছিল ৭০ টাকা। দুই শয্যার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা, যা আগে ছিলো ১৩০ টাকা।
তবে ব্যয়বহুল শহর হিসেবে চিহ্নিত দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও গাজীপুর শহরে এই ভাড়ার পরিমাণ আরেকটু বেশি। এসব এলাকায় এক শয্যার রুমের নতুন ভাড়া ২০০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৯০ টাকা। দুই শয্যার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের ভাড়া ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৭০ টাকা।
এই হারের ভাড়া এক থেকে তিন দিনের অবস্থানের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে চার থেকে সাত দিন বা সাত দিনের বেশি অবস্থানের ক্ষেত্রে আরও বেশি ভাড়া প্রযোজ্য হবে।
একইভাবে, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্পোরেশন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়াও সামান্য বেশি নির্ধারিত হয়েছে। তাদের জন্য এক শয্যার রুমের ভাড়া বর্তমানে ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ৯০ টাকা। দুই শয্যার রুমের ভাড়া এখন ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ১১০ টাকা। উচ্চ খরচের এলাকাগুলোতে সার্কিট হাউস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই শ্রেণির কর্মকর্তাদের বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
আর বেসরকারি ব্যক্তিদের সকল শহরের সার্কিট হাউসে এক শয্যার এসি রুমের ভাড়া দিতে হবে ১৫০০ টাকা ও দুই শয্যা বিশিষ্ট এসি রুমের ভাড়া দিতে হবে ১৮০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সার্কিট হাউজের ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বেশি ব্যবহার করেন সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে দেখা গেছে, তদন্ত, পরিদর্শন কাজে জেলা পর্যায়ে বেশি ভ্রমণ করেন নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তারা। তাদের আয় স্তর এবং প্রধান খরচের ক্ষেত্রগুলো এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বিবেচনায় আনা হয়েছে।
এছাড়াও, দৈনিক ভাতা ও যাতায়াত ভাতার ক্ষেত্রে সরকারের সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোকেও বিবেচনা করা হয়েছে। নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মতামতও বিবেচনা করা হয়েছে।
কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সার্কিট হাউসের ভাড়া বৃদ্ধি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে সার্কিট হাউসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এর আগে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২০১২ সালে। এরপর দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল পরিবর্তন হয়েছে। আবার সার্কিট হাউজে অতিথিদের সেবায় যেসব পণ্য সরবরাহ করা হয়, সেগুলোর দামও বেড়েছে। সার্কিট হাউসের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বেড়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।'
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, দেশের প্রতিটি জেলাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আওতায় একটি করে দুই বা তিন তলা বিশিষ্ট সার্কিট হাউস রয়েছে। সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এখানে রাত্রিযাপন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা আয়োজন করে থাকেন।
সরকারি কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় সফর করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল ব্যবস্থাপনায় সার্কিট হাউস ব্যবহার করা হয়। বিদেশি অতিথিদের থাকার জন্যও সার্কিট হাউজকে বেছে নেওয়া হয়ে থাকে।
এজন্য সরকার দেশের সার্কিট হাউজগুলোর অবকাঠামো ও সেবার মান উন্নত করেছে। অনেক সার্কিট হাউজে তারকামানের হোটেলের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
সার্কিট হাউসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালে সরকার দেশের ৩৭টি জেলার সার্কিট হাউসের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে প্রকল্প নেয়। ১৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
একজন জেলা প্রশাসক বলেন, সার্কিট হাউসের ভাড়া ও সেবার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, 'সার্কিট হাউজ রাষ্ট্রীয় কাজের অংশ, যেমন একজন কর্মীর অফিস বা অফিসের আসবাব। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে থাকতে নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করেন। এখানকার পরিবেশ, খাবারের ধরন, ব্যবস্থাপনা সরকারি কর্মীদের জীবনাচরণ ও কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।'