নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ০৯, ২০২৪
০৫:২৫ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ০৯, ২০২৪
০৫:২৫ অপরাহ্ন
এক বছরের মধ্যে সব কিছু সংস্কার হবে সেটা, কোনো বিবেকবান মানুষ চিন্তা করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি।’
শনিবার (৯ নভেম্বর) সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে ষ্পষ্ট কথা, শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি, অর্ধ লাখ মানুষ রক্ত দেয়নি।’ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাগুলোর কারণে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলো গত ১৬ বছরে বিরক্ত হতে হতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল-এই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর কারণে। আজকে যদি সেই দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর নুন্যতম সংস্কার না করে আপনি নির্বাচনের দিকে যান-ওই নির্বাচন কমিশন ওটাও তো একটা সিস্টেম এবং গত ১৬ বছরে সবচেয়ে ব্যর্থ সিস্টেম ছিল ওই নির্বাচন কমিশন।’ নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি নির্বাচন কমিশনে জাস্ট একটা ভোটার তালিকা দিলেন আর নির্বাচন কমিশনের, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় লোকজন, জনবল সেট করে তালিকা পাঠালেন, এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।’
শুধু নির্বাচন কমিশন সংষ্কর করলে হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন কোনোদিনও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। আপনার পুরো দেশে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহীনির যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা সেটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসতে হবে। তা না হলে আপনি নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে আবার জবরদখল দেখবেন। সেই জবরদখল, ক্ষমতার অপব্যবহার-এটা তো আমরা দেখতে চাই না, সে যেই হোক না কেন। পাশাপাশি এই নির্বাচন কেন্দ্রিক ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয় সেগুলোর জন্য তো বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আপনার এই বিচার ব্যবস্থার তো সংস্কার প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কারের পর নির্বাচন এমন কোনো চাওয়া নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই বলছি না, রাষ্ট্রের সবকিছু সংস্কার করে তারপরে নির্বাচনে যান। আমরা কখনই বলছি না পাঁচ-ছয় বছরে আপনারা এই সংস্কার করে তারপর নির্বাচনে যান। কিন্তু কমপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড একটা সময় তো লাগবে। কোনো বিবেকবান মানুষ তার জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারবে না যে, এক বছরের মধ্যে সবকিছু সংস্কার হয়ে যাবে। এটা কখনোই সম্ভব নয়।’ ১৬ বছর ধরে সিস্টেম ধ্বংস হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘১৬ বছর ধরে এই সিস্টেমকে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে শেষ করা হয়েছে। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি এই যে সিস্টেমগুলো যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলোর একটি যৌক্তিক সংস্কার হওয়ার পরেই যত দ্রুত সম্ভব অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।’
এই সরকার সবার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে অন্তবর্তীকালীন এটা সরকার সেটা ২১ জনের সরকার না, এই অন্তবর্তীকালীন সরকার এই অভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, সমর্থন দিয়েছিল তাদের সকলের সরকার। এত জীবনের বিনিময়ে, এত রক্তের বিনিময়ে, এত মানুষের সমর্থনে যে অভ্যুত্থান হয়ে এই সরকার এসেছে এটি বাংলাদেশের সরকার।’ এ সরকারের সংস্কারের পূর্ণ অধিকার রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেই জায়গা থেকে নৈতিকভাবে বলি, আইনগতভাবে বলি এই সরকারের পূর্ণ অধিকার অবশ্যই রয়েছে যে সংষ্কারগুলো হওয়া প্রয়োজন, যে সংস্কারগুলো আমরা ছাত্রজনতার কাতার থেকে প্রয়োজন মনে করি সেগুলো করার।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিলেটে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদ পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। আপাতত যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেয়া হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে শহীদের পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দিচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। বাকি যারা রয়েছেন তাদের কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সেগুলো হাতে পেলে অনুদানের চেক তুলে দেয়া হবে।’
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সিলেটে শহীদ হওয়াদের মধ্যে ১৮ পরিবারের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।
এএফ/০১