কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
০৪:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৪, ২০২৫
০৪:৩৮ অপরাহ্ন
সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জে রেল মন্ত্রণালয়ের রোপওয়ে বাংকারে সরকারি পরিবর্তনের পর থেকেই সরকারি স্থাপনা ভাংচুর, লুটপাট ও সংরক্ষিত এলাকায় বালু-পাথর উত্তোলনসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট চললেও দায়িত্ব অবহেলায় নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে পারেনি আরএনবি (রেলের নিরাপত্তা বাহিনী)।
গত পাঁচ মাস ধরে রেলওয়ে এ ঐতিহাসিক স্থানটিতে ভাংচুর ও লুটপাট হলেও আরএনবি সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে চার মাস কর্মস্থলে ছিলেন না কেউ। এ সুযোগে যে যার মতো করে শতবর্ষী এ স্থানটিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত করেছে দুর্বৃত্তরা। এরকম পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ আমলে তৈরি রোপওয়ে বাংকার ধ্বংসের শেষপ্রান্তে আসার পর অনেকটা চুপিসারে ভোলাগঞ্জ বাংকার ঘুরে গেলেন রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) শিডিউল অনুযায়ী তাঁর দুপুর ২টায় পরিদর্শনে আসার কথা থাকলেও তার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি অনেকটা গোপনে রোপওয়ে এলাকা পরিদর্শন করে চলে যান।
বাংকারের লুটপাট নিয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। রেলওয়ের ডিজির পরিদর্শনে আসার খবরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বাংকারের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায় ছিলেন। তারা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ২টার আগেই সেখানে পৌঁছান। তবে ততক্ষণে তিনি বাংকার এলাকা ত্যাগ করে চলে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাংকার) এলাকায় কোন দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমাদেরকে সে বিষয়টি দেখতে হয়। কিন্তু এই এলাকা পরিদর্শনে রেলওয়ের মহাপরিচালক আসলেও আমরা সে বিষয়টি জানিনা।
সেখানকার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)-এর ইনচার্জ আশরাফুজ্জামান লষ্কর জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় রেলওয়ের মহাপরিচালক এসেছিলেন। তিনি বাংকার পরিদর্শন করে দেড় ঘন্টার মধ্যে সেখান থেকে চলে গেছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে রয়েছে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (বাংকার)। ৩৫৯ একর জমি নিয়ে ১৯৬৪ সালে নির্মাণ হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। সেখান থেকে ছাতক পর্যন্ত চালু হয় রজ্জুপথ। বাংকার এলাকা পাথর অধ্যুষিত হওয়ায় রেলওয়ের জমি থেকে দীর্ঘদিন থেকে পাথর লুটপাট হয়ে আসছে। ৫ আগষ্টের পর সেখানের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবিকে সরিয়ে নেওয়ায় লুটপাটে বিলীন হয়ে গেছে পুরো বাংকার এলাকা। পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে ১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতকে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপলাইন। এর মধ্যে আছে ভোলাগঞ্জ লোডিং স্টেশন (বাংকার) ও ছাতক খালাস স্টেশন। বাংকারের ৩৫৯ একর জমি, অবকাঠামোসহ রেলের স্থাপনা, যন্ত্রপাতি দেখভাল করতে ২০০০ সাল থেকে আনসার বাহিনী দায়িত্বে ছিল। তবে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আনসার বাহিনীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেয় রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবি। রোপওয়ের খুুঁটি হেলে পড়ায় ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে পড়ে পাথর পরিবহন। এর পর এটি আর চালু করা যায়নি। বন্ধ রোপওয়ের এই জমিতে গত মাস থেকে দিনের বেলা ডিউটি করতেছে আরএনবি সদস্যরা। তবে রাতে তারা ডিউটি না করায় বন্ধ হচ্ছে না বাংকারের জমি থেকে পাথর লুটপাট।
এএফ/০৭