প্রধান উপদেষ্টা আজ চীন যাচ্ছেন

সিলেট মিরর ডেস্ক


মার্চ ২৬, ২০২৫
০৫:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২৫
০৫:৪১ পূর্বাহ্ন



প্রধান উপদেষ্টা আজ চীন যাচ্ছেন


অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সফরে আজ বুধবার চীনে যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। পরদিন শুক্রবার বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা বেইজিংয়ে সরকারি দ্বিপক্ষীয় সফরে যাবেন।

বেইজিংয়ে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করছি। তার মধ্যে রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক সহযোগিতা, গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহযোগিতা। এ ছাড়া অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি সম্পর্কিত ঘোষণা আসতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, চীনকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে আমরা ধারণ করি, চীনও আমাদের ধারণ করে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, ‘চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কোনো এজেন্ডাভিত্তিক নয়। নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা ইস্যু উঠতে পারে।

চীন সফরে রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমার ইস্যুতে চীনের মতামত আমরা নেব।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেড়েছে। কুনমিংয়ে বাংলাদেশিদের জন্য চারটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তারা একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করবে।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফরটি একাধিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে যে কয়েকটি দেশ সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে, তাদের মধ্যে চীন অন্যতম।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত চীন হলো একমাত্র দেশ যারা জুলাই মাসে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উন্নত চিকিৎসার জন্য ‘ন্যাশনাল হেলথ কমিশন অব চায়না’ থেকে ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসক প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। ওই চিকিৎসক প্রতিনিধিদল বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই সফরটি বাংলাদেশ-চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঐতিহাসিক সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের সম্পর্ককে আরো গভীর করার এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনের একটি সুযোগ তৈরি করবে। উল্লিখিত দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চীন বাংলাদেশের পরম বন্ধু, নিকটতম প্রতিবেশী, কৌশলগত অংশীদার এবং অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যা গভীরতর হচ্ছে। এ বছর চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে দুই দেশ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল চীনে চার দিনের সরকারি সফর করবে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আমাদের এই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের এই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার এই চীন সফর আমাদের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা যায়।’

সফরসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে বোয়াও ফোরাম শুরুর প্রাক্কালে প্রধান উপদেষ্টা এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার তিং শুয়েই সিয়াংয়ের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ফোরামের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান বান কি মুন, লাওসের প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী, মঙ্গোলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

সফরসূচি অনুযায়ী, আগামী শুক্রবার সকালে চীনের গ্রেট হলে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কৃষি, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহায়তা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিয়ে চীনা বিনিয়োগকারীদের অবহিতকরণ এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে আয়োজিত ‘চীনের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগ সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর তিনি ওই ভেন্যুতেই টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশে ২.০-তে উৎপাদন ও বাজারের সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা, তরুণ উদ্যোগ ও তিন শূন্যের বিশ্ববিষয়ক তিনটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন। সেখানে বিভিন্ন কম্পানির সিইও এবং সামাজিক ব্যবসা খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তি, চীনের স্বনামধন্য কম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশি ও চীনা তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করবেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে আগামী শনিবার সকালে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে। সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। সেদিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা চীনের স্বনামধন্য মিডিয়া সংস্থা ‘চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি)’ একান্ত সাক্ষাৎকার দেবেন। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্কের নানা দিক এবং ভবিষ্যৎ রূপরেখা প্রণয়নে এবং সমসাময়িক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে আসবে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে পরিচিত করতে চান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই লক্ষ্য সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, চীনের এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি এক মাইলফলক সফর হতে যাচ্ছে। ২৮ মার্চ সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করছেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজতর পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি সমন্বয় করাও পরিকল্পনার অংশ। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন।


এএফ/০২