দিরাইয়ে পুকুরের পানি পান করে ১১টি গরুর মৃত্যু

দিরাই প্রতিনিধি


মার্চ ২৯, ২০২০
১০:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২০
১০:৪০ অপরাহ্ন



দিরাইয়ে পুকুরের পানি পান করে ১১টি গরুর মৃত্যু

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে পুকুরের পানি পান করে মারা গেছে ১১টি গরু। আজ রবিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের সুতারগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

 

মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে ১১টি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুরের পানি সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।

 

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুতারগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে পড়ে আছে সুতারগাঁও গ্রামের দিগেন্দ্র দাসের ৩টি, দিলিপ দাসের ২টি, শিশির মোহন দাসের ১টি, তিলক মোহন দাসের ১টি, হরিলাল দাসের ১টি, রায় মোহন দাসের ১টি, পিন্টু দাসের ১টি ও চাতলপাড় গ্রামের নজির খানের ১টিসহ ১১টি গরুর নিথর দেহ।

 

গ্রামবাসী জানান, পার্শ্ববর্তী চাতলপাড় গ্রামের আনিস উল্লার পুত্র আবু সালাম সরকারি জায়গার ছোট ছোট ডোবা দখল করে মৎস্য চাষ করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে রাস্তায় মাটি ভরাটের ফলে একটি গর্ত হয়। সেখানে বৃষ্টির পানি জমে পুকুরের মতো হলে তা দখলে নিয়ে তাতে মাছের রেনু ফেলার জন্য গতকাল শনিবার বিষ প্রয়োগ করেন তিনি। প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার সকাল ৯টার দিকে গ্রামের পঞ্চায়েতি তিন রাখাল বিভিন্ন মালিকের প্রায় অর্ধশতাধিক গরু নিয়ে ঘাস খাওয়ানোর জন্য মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে বিষ প্রয়োগকৃত ডোবার পানি পান করে কয়েকটি গরু। পানি পান করার কিছুক্ষণের মধ্যেই গরুগুলো লাফাতে লাফাতে মাটিতে পড়ে মারা যায়।

 

ওই গ্রামের শিশির মোহন দাস বলেন, সরকারি জায়গার সবগুলো ডোবা দখল করে মাছ চাষ করে আসছেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের আবু সালাম। আমাদের গবাদি পশুগুলোকে মাঠে পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেই। কিছুদিন পুর্বে সরকারি সড়কে মাটি তোলার ফলে বৃষ্টির পানি জমে পুকুরের মতো হয়। সেটিও দখলে নিতে তিনি বিষ প্রয়োগ করেন। আজ সকালে আমাদের গ্রামের পঞ্চায়েতি রাখালরা গরু নিয়ে হাওরে যাওয়ার পথে কয়েকটি গরু সেই পুকুরের পানি পান করার কিছুক্ষণের মধ্যে একে একে ১১টি গরু মারা যায়।

 

চাতলপাড় গ্রামের সুজন খান বলেন, গরু মারা যাওয়ার দৃশ্য দেখে রাখালরা চিৎকার শুরু করলে গ্রামের লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। করোনাভাইরাসে হাওরে একের পর এক গরু মারা যাচ্ছে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গ্রামের নারীরা শিশুদের ঘরে আটকে রেখে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন।

 

অভিযুক্ত আবু সালাম বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েতের আদেশে রাস্তায় মাটি তোলার জন্য পুকুরটি আমি শুকিয়ে ফেলেছি। তাদের অনুমতি নিয়েই সেখানে মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য চুন প্রয়োগ করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিষ দেওয়া হয়নি।

 

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এফ এম বাবরা হ্যামলিন বলেন, গরুগুলো কি কারণে মারা গেছে তা সঠিক করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য পাঠাবো। রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর কারণ বলা যাবে। তবে ধারণা করছি গরুগুলো বিষক্রিয়ার কারণেই মারা গেছে।

 

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, পুকুরের পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে বিষ দেয়া হয়েছে কিনা তা জানার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। রিপোর্ট এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল জানান, যেহেতু ১১টি গরুর মৃত্যুর ধরণ একরকম, তাই মৃত দু'টি গরু ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।