নগরের পাড়া-মহল্লায় ভিড়, আড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক


মার্চ ৩১, ২০২০
০১:৪৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ৩১, ২০২০
০৫:১৩ অপরাহ্ন



নগরের পাড়া-মহল্লায় ভিড়, আড্ডা
সরেজমিনে দেড় ঘণ্টা

সময় সন্ধ্যা ছয়টা। আজ সোমবার। স্থান শিবগঞ্জ এলাকা। জটলা বেঁধে কয়েকজন মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাঁদের সবাই তরুণ। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা-টানা দেড় ঘণ্টা নগরের ১৮টি এলাকা ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার গলি-রাস্তায় মানুষের ভিড়। কেউবা আড্ডায় মশগুল, আবার কেউবা চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রয়োজন ছাড়াই নগরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন। এই সময়টাতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা ও শিবগঞ্জ এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি উপশহর, যতরপুর, মীরাবাজার, সোবহানীঘাট, কাষ্টঘর, বিলপাড়, ছড়ারপাড়, চালিবন্দর, কামালগড়, সেনপাড়া, কুমারপাড়া, রায়নগর, শাহী ঈদগাহ ও বনকলাপাড়া এলাকার গলি-রাস্তায় নানা বয়সী মানুষদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

কামালগড় এলাকায় কথা হয় রমিজ মিয়ার সঙ্গে। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি জানান, করোনার কারণে বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি ঘরে বন্দী হয়ে রয়েছেন। টিভি দেখে ঘরে সময় কাটাচ্ছেন। ঘরে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। চারদিন পর তিনি আধা ঘণ্টা আগে বাসার বাইরে মাস্ক পরে একটু হাঁটতে বেরিয়েছেন। এখন শরীর ও মন ভালো লাগছে। তবে এখনই বাসায় ফিরে যাবেন।

নগরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা জানান, পাড়া-মহল্লার অধিকাংশ চায়ের স্টলই বন্ধ রয়েছে। তবে দু-একটি স্থানে এসব দোকান খোলা রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে কয়েকজন চা পান করছেন। তবে অধিকাংশ স্থানেই দু-একজন বন্ধু মিলে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে সামান্য সময়ের জন্য আড্ডা দিচ্ছেন। আম্বরখানা এলাকায় সবজি কিনতে আসা মাহতাবুর রহমান (৪৮) বলেন, ‘বাসার সবজি শেষ। তাই বাজার করতে এসেছি। তবে অনেক তরুণদের দেখলাম, অকারণে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের নিশ্চয়ই এখন বাসার বাইরে কোনো কাজ নেই। তারা কেন বাসায় না থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা বোধগম্য হলো না। নিজের ও সমাজের স্বার্থেই সবাইকে বাসায় থাকা উচিত।’

দেখা গেছে, বাইরে যাঁরা কারণে-অকারণে ঘোরাফেরা করছেন, তাঁদের অনেকেরই মুখে মাস্ক পরা। কারও হাতে গ্লাভসও রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে কেউই চলাফেরা করছেন না। জটলা বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। এ রকম জটলা বেঁধে আড্ডারত শফিউল ইসলাম নামের এক তরুণের সঙ্গে কথা হয় মীরাবাজার এলাকায়। তিনি জানান, সারা দিন বাসার ভেতরেই ছিলেন। একটু আগে তিনি বাসা থেকে বেরিয়েছেন। মুখে মাস্ক থাকায় পাশাপাশি বন্ধুরা একত্রে হয়ে কথা বলছিলেন। তবে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই শফিউলসহ অন্যরা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলা শুরু করেন।

সেনপাড়া এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তাঁর গ্যারেজ বালুচর এলাকায়। তিনি জানান, রিকশা ভাড়ার আয় ছাড়া তাঁর অন্য কোনো পেশা নেই। ঘরে জমানো টাকাও নেই। তাই বাসা থেকে সকালে বেরিয়েছেন। সারা দিনে মাত্র ৫০ টাকা আয় করেছেন। সামনের দিনগুলোতে কেমন করে চলবেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তায় রয়েছেন। ওই এলাকায় কথা হয় পথচারী সুধাময় রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাট তুলনামূলকভাবে ফাঁকা। দু-একটি স্থানে কিছু মানুষকে আড্ডা দিতে দেখেছি। তবে সেটা কম। ফাঁকা রাস্তা থাকায় একটু হাঁটতে বেরিয়েছি।’