কানাইঘাট প্রতিনিধি
এপ্রিল ০৯, ২০২০
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৯, ২০২০
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেছেন, নোবেল করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারী। সারা বিশ্বে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে মৃত্যুর মিছিল চলছে। এর প্রাদুর্ভাব থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে সারাদেশে সরকারিভাবে বিভিন্ন বাধা-নিষেধ জারি করেছেন। করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে এই মহামারী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। তখন পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
পুলিশ সুপার আজ বুধবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় কানাইঘাট থানার পুলিশের উদ্যোগে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দারুল মাদরাসা মাঠে ৬০টি অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্য তেল বিতরণকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, করোনা থেকে জনগণকে সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সিলেট জেলা পুলিশের অর্ন্তভুক্ত সকল থানার পুলিশ দিনরাত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রতিদিন জেলা পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাতে করে জনসাধারণ লকডাউন মেনে চলেন, এ জন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সিলেটের সকল গুরুত্বপূর্ণ থানা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল কোর্টে জেল-জরিমানা এবং বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করেছে। এছাড়া প্রবাসফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে পুলিশের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। সিলেটের মানুষ যাতে করে প্রাণঘাতী এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পারেন, এ জন্য লকডাউন মেনে অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া যাতে করে কেউ ঘর থেকে বের হতে না পারেন এ জন্য পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। কেউ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এই দুর্যোগ মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি জেলা পুলিশ এবং জেলার অধীনস্থ সকল থানার পুলিশ ঘরবন্দি, অসহায়, দিনমজুর মানুষের হাতে সাধ্য অনুযায়ী খাদ্য তুলে দেওয়ার জন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে।
ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে এখন থেকে সিলেট জেলায় কোনো ধরণের গণজমায়েত করে কেউ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে পারবেন না। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে যাবে। প্রয়োজনে দানশীল ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন থানা পুলিশের কাছে তাদের অনুদানের খাদ্যসামগ্রী দিতে পারেন। সেটা আমরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেব।
এছাড়া বুধবার পুলিশ সুপার কানাইঘাটের বেদে পল্লী এবং পৌরসভার রায়গড় গ্রামের বেশ কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। পরবর্তীতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সবমিলিয়ে ৫শ পরিবারে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেবেন টিম কানাইঘাট থানার সদস্যরা।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম'র সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) ইমাম মোহাম্মদ সাদিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর হেডকোয়ার্টার) লুৎফুর রহমান, কানাইঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ হান্নান, পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন, কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম, ওসি (তদন্ত) আনোয়ার জাহিদ, দারুল মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনসহ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ।
কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, আজ প্রায় দেড়শ পরিবারে পুলিশ সুপার স্যার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। পর্যায়ক্রমে উপজেলার একেবারে অসহায় দরিদ্রদের চিহ্নিত করে আমরা আরও সাড়ে ৩শ পরিবারের খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেব। পুলিশ তার সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাবো, আপনারা এই দুর্যোগ মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন।
