বিশ্বনাথে মাদরাসাছাত্র খুনের নেপথ্যে 'ব্ল্যাকমেইল'

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি


এপ্রিল ১১, ২০২০
০১:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১১, ২০২০
০১:৪৮ পূর্বাহ্ন



বিশ্বনাথে মাদরাসাছাত্র খুনের নেপথ্যে 'ব্ল্যাকমেইল'
আসামির দায় স্বীকার

নিহত মাদরাসাছাত্র হাফিজ আব্দুর রহমান নূরুল আমীন ওরফে লায়েছ

সিলেটের বিশ্বনাথে ব্ল্যাকমেইল থেকে রক্ষা পেতে মাদরাসাছাত্র হাফিজ আব্দুর রহমান নূরুল আমীন ওরফে লায়েছকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, পেটে ও পায়ে একাধিক আঘাত করে হত্যা করে লজিং বাড়ির গৃহকর্তার পুত্র ১৬ বছর বয়সী কিশোর আশফাক আহমদ রাতুল। রাতুল বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাণ সিরাজপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার পুত্র।

আজ শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আশফাক আহমদ রাতুল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম মূসা।

ওসি শামীম মূসা জানান, আটকের পর আশফাক আহমদ রাতুল পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেছে, তাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন লজিং মাস্টার আব্দুর রহমান নূরুল আমীন ওরফে লায়েছ। তিনি রাতুলের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে একাধিক ফেক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে রাতুলকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন। এই ব্ল্যাকমেইল থেকে রেহাই পেতে লায়েছকে প্রায় ২০ হাজার টাকা দেন রাতুল। সর্বশেষ তার কাছে আরও ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন লায়েছ। এ নিয়ে তাদের দু'জনের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ব্যাপারে নিজ পরিবারের কাছে রাতুল বিচারপ্রার্থী হলে উল্টো লায়েছের পক্ষাবলম্বন করেন পরিবারের লোকজন। এতে লায়েছের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রাতুল। একপর্যায়ে লায়েছকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় রাতুল এবং বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক সিনেমা দেখে সে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।

গত বুধবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে জরুরি আলাপের কথা বলে লায়েছের কক্ষে প্রবেশ করে রাতুল। এ সময় লায়েছ প্রস্রাব করার জন্য ঘরের বাইরে গেলে রাতুল তার সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরিটি বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর লায়েছ কক্ষে ফিরলে তার সঙ্গে আলাপ শুরু করে রাতুল। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেকে সুরক্ষিত রেখে ধারালো ছুরি দিয়ে লায়েছের বুকে, পেটে ও পায়ে একাধিক আঘাত করে রাতুল। একপর্যায়ে লায়েছ গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে ছুরিটি ঘরের বাইরের ঝোপে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে রাতুল। সে বলতে থাকে- কেউ একজন লায়েছকে মেরে পালিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় লায়েছকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর আশফাক আহমদ রাতুল ও তার পিতা সেলিম মিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্বনাথ থানার পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আশফাক আহমদ রাতুল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম ওরফে এলাইছ মিয়া বাদী হয়ে আশফাক আহমদ রাতুলকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৮)।

আজ শুক্রবার সকালে আদালতে আশফাক আহমদ রাতুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর তাকে সিলেটের বাগবাড়িস্থ কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

প্রসঙ্গত, নিহত হাফিজ আব্দুর রহমান নূরুল আমীন ওরফে লায়েছ বিশ্বনাথ দারুল উলুম কামিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসী গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর পুত্র। লায়েছ দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে বিশ্বনাথ উপজেলার পুরাণ সিরাজপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়িতে লজিং থাকতেন। সম্প্রতি লজিং পরিবর্তনের জন্যে তার সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি। শবেবরাত শেষে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ছিল তার।