করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১২, ২০২০
০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০২০
০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন



করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে সিলেট
* দুটি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা হবে *চিকিৎসকদের জন্য আবাসন ও পরিবহনের ব্যবস্থা

সিলেটে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি আরও দুটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্যদের থাকার জন্য একটি আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা এবং তাদের পরিবহনের জন্য আলাদা চারটি গাড়িও প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

গত দুদিন প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, নগর সংস্থা এবং বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠনের কয়েকদফা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নগরের একটি হোটেলে সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল এন্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সভা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমেদ। সভায় করোনা পরিস্থিতিতে সিলেটে আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

জানা যায়, সভায় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের পাশাপাশি আরও দুটি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জানানো হয় একটি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুত আছে। কিন্তু ওই হাসপাতালে সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসাধীন থাকায় এটিকে প্রথমেই ব্যবহার না করে ‘সেকেন্ড অপশন’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নগরে আরেকটি হাসপাতালকে প্রথমেই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা সিদ্ধান্ত হয়। সূত্রমতে, ওই হাসপাতালে বর্তমানে ভেন্টিলেশন সুবিধাসহ ৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এছাড়া আরও ১১টি আইসিইউ বেড চালু করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি ফ্লু কর্ণার স্থাপন, চারটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা এবং মৃতদের সৎকারে সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসব সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মিররকে বলেন, ‘বর্তমানে শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চালু আছে। এর পাশাপাশি দুটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১১টি আইসিইউ বেড চালুসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ৩-৪ দিনের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। আজও (শনিবার) বিভাগীয় কমিশনার ও স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। মেয়র বলেন, ইতোমধ্যে চারটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এবং বিএমএ একটি করে অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করবে। এছাড়া ঢাকাস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন দুটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার ব্যপারে সম্মত হয়েছে বলে তিনি জানান।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্যদের থাকার জন্য একটি আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের ভিন্ন জায়গায় অবস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এর অংশ হিসাবে সিলেটেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের বিভাগীয় একটি সভায় আলোচনা ও হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখনো এরকম পরিস্থিতি হয়নি তবুও আমরা এসব বিষয় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আবাসনের ব্যবস্থা হলে চিকিৎকরা সাত দিন ডিউটি করে ১৪ দিন ওই হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এভাবেই কাজ চলবে।’ এ ক্ষেত্রে একটি আবাসিক হোটেল ভাড়া নেওয়া হবে। তবে এখনো কোনো হোটেল নিদিষ্ট করা হয়নি বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘আবাসনের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্সদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবহনের ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের উপর নির্দেশও আছে। সেজন্য আজ শনিবার জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে যে তিনটা গাড়ি রিকুইজিশন বা যেকোনো ভাবে প্রস্তুত করার জন্য। '

নতুন হাসপাতাল প্রস্তুত করা প্রসঙ্গে ডা. আনিসুর বলেন, ‘শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে যে শয্যা আছে তা পূর্ণ হয়ে গেলে আমাদের তো অন্য কোথাও রোগীর চিকিৎসা দিতে হবে। এর জন্য আরও একটি বা দুইটি হাসপাতাল প্রস্তুতের পরিকল্পনা চলছে।'

সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল এন্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভায় আলোচনায় অংশ নেন এবং উপস্থিত ছিলেন, বিএমএ সিলেটের সদস্য সচিব ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আজিজুর রহমান রোমান, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ তারেক আজাদ, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. নাজমুল হক, উইমেন্স মেডিকেলের পরিচালক ডা. মো. ফেরদৌস হাসান, পার্কভিউ মেডিকেলের পরিচালক ডা. এম এ ছালাম, ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ কে আখতারুজ্জামান, ওয়েসিস হাসপাতালের পরিচালক ডা. সোলাইমান আহমেদ, আল হারামাইন হাসপাতালের পরিচালক ডা. নাহিয়ান আহমেদ চৌধুরী, ডা. সৈয়দ মাহমুদ হাসান ও জাকির আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।

 

এএফ/১৪