আয় বন্ধ, বাড়ছে দুশ্চিন্তা

সিলেট মিরর ডেস্ক


এপ্রিল ১৩, ২০২০
০৭:১২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০২০
০৭:১২ পূর্বাহ্ন



আয় বন্ধ, বাড়ছে দুশ্চিন্তা

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত ছুটির দিন আরও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ ছুটি আপাতত বর্ধিত করা হয়েছে। এ সময়টাতে মানুষজনকে ঘরে থাকতেই অনুরোধ জানানো হয়েছে। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনে কেউ বেরোতে পারবেন। এ অবস্থায় এখন বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং বেসরকারি চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, পরিবহন চালক-শ্রমিকেরা পড়েছেন বেকায়দায়। বন্ধে উপার্জনহীন হয়ে পড়াদের সংসার চলবে কীভাবে, সেটাই এখন অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনমজুর ও পরিবহন চালক থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের উপার্জন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ওষুধ, মুদি, কাঁচামাল, ফল ও মাছের দোকান ছাড়া সকল ব্যবসায়ীদের দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় গত তিন সপ্তাহ ধরে এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব মানুষের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকের জমানো টাকাও শেষ হয়ে গেছে। ঠিক কতদিন এমন অবস্থা চলবে, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। তাই চরম আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

দুজন বেসরকারি চাকুরিজীবী জানান, যাঁরা সরকারি চাকুরিজীবী রয়েছেন, তাঁদের হয়তো চাকরি ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হবে না। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কারোনার প্রভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে কর্মী ছাটাইয়ের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় করোনোর ভীতির পাশাপাশি অনেকের মনে ভবিষ্যতে চাকরি হারানোর আশঙ্কাও ভর করছে। এত মানসিক চাপ অনেকে সহ্য করতে পারছেন না। সবমিলিয়ে একটা চরম দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে মানুষজন সময় কাটাচ্ছেন।

সিলেট নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা খায়রুজ্জামান আক্তার বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সরকারি নির্দেশনা মেনে আমাদের অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে করোনার সময় কেটে গেলে যখন অফিস পুনরায় চালু হবে, তখন নানা ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব বলে উড়ো উড়ো খবর পাচ্ছি। নতুন অর্থবছরে বেতন বাড়া তো দূরের কথা, বরং কিছু বেতন কমিয়ে নেওয়া হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।’ বালুচর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শেখ আহমেদুল হক বলেন, ‘আমি মাঝারি ধরনের কাপড়ের ব্যবসায়ী। ব্যবসার আয় থেকেই সংসার চালাই। সামনে নববর্ষ ও ঈদ। অথচ এ সময়টাতেই দোকান গুটিয়ে আমাদের বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে। জমানো টাকাও এরই মধ্যে শেষ হয়ে এসেছে। এই মাস কোনোরকমে চলে যেতে পারব। পরের মাসেও যদি এভাবে ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হয়, তাহলে সংসারের খরচ কোথা থেকে মেটাব, সেটাই ভাবছি।’

ঝরনারপাড় এলাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন, তিনি সিলেট শহরতলীতে একটি কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীদের আয় দিয়েই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের অপরাপর খরচ চালান। এ কিন্ডারগার্টেনে নি¤œআয়ের পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করে থাকে। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে কিন্ডারগার্টেনটি বন্ধ রয়েছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিতে পারেননি। করোনা-পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার পর এই আর্থিক ধকল তিনি কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, এর কোনো সমাধানই তাঁর মাথায় আসছে না।

শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী আয়েশা বেগম জানান, তাঁর স্বামী নেই। এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। পাঁচটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেই তিনি সংসার চালান। করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাসে তাঁকে কাজ থেকে সাময়িকভাবে ছুটি দেওয়া হয়। তিনটি বাসার মালিকেরা তাঁকে একমাসের আগাম বেতন দিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে তিনি মার্চ মাস ও চলতি মাসের প্রথম দশদিন কোনোরকমে কাটিয়ে দিয়েছেন। সহসাই তাঁর আর কাজে যোগ দেওয়া হবে না, এটা তিনি বুঝতে পারছেন। এ মাসের বাসা ভাড়া তিনি কোথা থেকে দেবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। এ ছাড়া দু-একদিনের মধ্যেই তাঁকে খাদ্যসংকটেও পড়তে হবে বলে জানালেন।

নগরের মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমাজের উচ্চবিত্তদের খুব একটা সমস্যা হবে না। নি¤œবিত্তরা মোটামুটি কমবেশি খাদ্য সহায়তা পাবে। তবে হঠাৎ করেই আয়হীন হয়ে পড়ায় মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়তে হয়েছে। কিছুদিন এমন অবস্থা চললে সামনের দিনগুলোতে তাঁদের জন্য এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। তখন একবেলা খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ দুশ্চিন্তায় অনেকের রাতের ঘুম উবে গেছে। সমস্যার সমাধানও কীভাবে হবে, সেটা ভেবেও কেউ কূল-কিনারা করতে পারছেন না। এরই মধ্যে অনেকের খাবার ও নগদ টাকাও শেষ হয়ে এসেছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এর প্রভাব জীবনযাপনে তীব্রভাবে পড়বে বলে তাঁদের অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

 

এস-০১/এএফ-০১