নববর্ষের সন্ধ্যায় যেন ভূতুড়ে নগর সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১৫, ২০২০
০৪:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২০
০৬:৪২ পূর্বাহ্ন



নববর্ষের সন্ধ্যায় যেন ভূতুড়ে নগর সিলেট

আজ মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখের দিন রাত ৮টায় নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকার চিত্র। ছবি- সিলেট মিরর

পয়লা বৈশাখ বাঙালীর আবেগ ও ভালবাসার নাম। জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এটি বাঙালির বৃহত্তর উৎসব। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ বরণে সকাল থেকেই বৈশাখী সাজে রাস্তায় বের হন লাখো মানুষ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় শুরু হওয়া বর্ষবরণ উৎসব চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। অথচ এবার চিত্র ভিন্ন। করোনাভাইরাসের ছোবলে এবার মলিন বাঙালির প্রাণের উৎসব। সারাদেশের মতো সিলেটের কোথাও হয়নি বর্ষবরণের উৎসব। রাস্তায় নেই মানুষের উপস্থিতি। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সিলেট নগরের ব্যস্ততম এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে নীরব, নিস্তদ্ধ। কম আলো, নিস্তব্ধতা যেন ভূতুড়ে নগরে পরিণত করেছে সিলেটকে।

সন্ধ্যা সাতটায় নগরের আম্বরখানা এলাকার চিত্র। ছবি- সিলেট মিরর

 

আজ মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকায় গিয়ে দেখা গেল ফাঁকা পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। কয়েকজন রিকশাচালক বিক্ষিপ্তভাবে যাত্রীর অপেক্ষায়। সময় গড়ায় তাদের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। যাত্রীর দেখা মিলে না। বাসায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে দুই-চারজন হাঁটতে বের হয়েছেন। তাদেরও তাড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যে একটা রিকশায় দুই যাত্রী আসতে দেখা গেল চৌকিদেখী সড়ক দিয়ে। তাদের যথারীতি থামালেন পুলিশ সদস্যরা। সন্ধ্যা ছয়টার পর বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। উত্তরে দুইজন বললেন, ‘ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন।’ একটু কড়া ভাষায় ধমক দিতেই সত্যটা বললেন, ‘বাসায় ভালো লাগে না কিনব্রিজের নিচে যাচ্ছিলাম ঘুরতে।’ করোনার বিষয়টি জানিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিলেন পুলিশ সদস্যরা। 

রাস্তায় যানবাহনও নেই বলা চলে। মাঝে মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি আসা যাওয়া করছে। 

আম্বরখানা হয়ে চৌহাট্টা পথে এগুতে চোখে পড়ে রাস্তার পাশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে মাস্ক লাগিয়ে বসে আছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। আর কোন মানুষের উপস্থিতি নেই। হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার গেইটের কাছে এসেও কারও দেখা পাওয়া গেলো না। দরগা গেইট এলাকায় রাস্তার পাশে কয়েকটা কুকুর ঘুরাফেরা করতে দেখা গেল।  

পৌনে আটটার দিকে নগরের আরেক ব্যস্ততম এলাকা চৌহাট্টায় এসেও দেখা গেল একই চিত্র। রাস্তার পাশে কয়েকটা ফার্মেসি কেবল খোলা। কোন ফার্মেসির সামনে তখন ক্রেতার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। শুধু কয়েকটি ফার্মেসীর সমানে ঔষুধ কোম্পানীর কয়েকজন প্রতিনিধিদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। 

রাত আটটায় নগরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার গিয়ে দেখা গেলো নীরব নিস্তব্ধ চারপাশ। আলো ঝলমলে জিন্দাবাজার কেমন আলোহীন ফ্যাকাশে। কয়েকটি বিপণীবিতানের সামনে নিরাপত্তাকর্মীরা বসে আছেন বিরস বদনে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কয়েকজন পথচারী ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়েনি। 

জিন্দাবাজার থেকে বন্দর যাবার পথে চোখে পড়ে এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীদের কেউ মোবাইলে কথা বলছেন, কেউ কুরআন তেলাওয়াত করছেন। 

রাত সাড়ে আটটায় কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেল। অন্য পয়েন্টগুলোতে মানুষের উপস্থিতি না থাকলেও এখানে কিছু মানুষের দেখা মিলল। পুলিশও তাদের পথ আটকিয়ে রাস্তার বের হওয়ার কারণ জানতে চাইছেন। বিনা প্রয়োজনে যারা বেরুচ্ছেন তাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন তারা। একপাশে দেখা গেলো সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাস্তা পরিস্কার করছেন।

নগরের এই কয়েকটি সড়কে পয়লা বৈশাখের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো মানুষের ভিড়ে মুখর থাকে। তীব্র যানজট লেগে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। যানজটের ভোগান্তির মধ্যেও মানুষের চোখে-মুখে  লেগে থাকে আনন্দের রেশ। এবার সেসবের কিছুই নেই। জনমানবহীন এই নগর যেন অপরিচত কোন ভূতুড়ে নগর। 

 

এনএইচ/এএফ-১৬