বাইরে লকডাউন, ভেতরে আড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১৫, ২০২০
০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২০
০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন



বাইরে লকডাউন, ভেতরে আড্ডা
কঠোর হচ্ছে প্রশাসন

সিলেট নগরের বিভিন্ন পাড়ায় প্রবেশের প্রধান ফটক লাগানো। সেখানে রং দিয়ে কাগজে বড় বড় হরফে ‘লকডাউন’ লিখে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকার প্রবেশ পথে স্থায়ী ফটক নেই সেসব এলাকায় বাঁশ আড়াআড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ‘লকডাউন’ টানানো। এই লকডাউন প্রশাসনের নির্দেশে নয়। এলাকাভিত্তিক স্ব উদ্যোগে নেওয়া। এ উদ্যোগের ইতিবাচক, নেতিবাচক-দুই ফলাফলই দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় লকডাউনে মানুষ চলাচল সীমাবদ্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে বেশিরভাগ এলাকায় এই ‘লকডাউনে’র আড়ালে পাড়ার ভেতরে বিভিন্ন বয়সীরা দিব্যি আড্ডা দিচ্ছেন, ক্যারাম খেলছেন, ছোটখাটো দোকানে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি চলছে। প্রতিবন্ধকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহজে ঢুকতে না পারার সুযোগ নিচ্ছেন তারা। প্রশাসন বলছে, এমন কার্যক্রম বেআইনি। দ্রুতই অভিযানে নামছে তারা।

জানা গেছে, সিলেটে গত ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন করে প্রশাসন। এছাড়া সিলেটের আর কোনো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করেনি প্রশাসন। নগরের লকডাউন করা এলাকাগুলোর সবই এলাকাবাসীর উদ্যোগে। যদিও এখন জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুরো জেলা ও নগরই লকডাউনে রয়েছে। 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের হাওয়াপাড়া, আম্বরখানা ঘুর্ণি আবাসিক এলাকা, আম্বরখানা সরকারি কলোনী, কমলাবাগান, বিমানবন্দর সড়ক থেকে পীরমহল্লায় প্রবেশের মুখ, রাজারগলি, কাজলশাহ, পীর মহল্লা, সুবিদবাজার, মীরাবাজার মৌসুমী আবাসিক এলাকা, চারাদিঘিরপাড়, নয়াসড়ক কিশোরীমোহন স্কুলের পাশের গলি, খ্রিস্টান মিশনের গলিসহ নগরের বিভিন্ন এলাকা স্থানীয় বাসিন্দারা লকডাউন করে রেখেছে। কিছু কিছু এলাকায় এমন উদ্যোগের কারণে মানুষ চলাচল সীমিত হলেও বেশিরভাগ এলাকায় লকডাউনের প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে। পাড়ার ভেতর কয়েকজন মিলে আড্ডা দেওয়া, ক্যারাম খেলাসহ নানা কার্যক্রম চলছে। কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। দূর থেকে দেখে যাতে বোঝা না যায়, সেজন্য অনেকে ক্লাবঘরের আলো নিভিয়ে ভেতরে আড্ডা দিচ্ছেন। পাড়ার ছোটখাটো মুদির দোকানও খোলা রাখছেন। তাতে বিক্রি হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট। তবে এমন পরিস্থিতিতে গত রবিবার রাতে নগরের বেশ কয়েকটি এলাকার লকডাউন লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাড়া বা মহল্লা লকডাউন করার আইনি অধিকার কোনো নাগরিকের নেই বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম উদ্দিন। সিলেট মিরর-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যারা এই কাজ করছেন, এটা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই কাজ করছেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ধরনের কিছু দেখলে আইনি ব্যবস্থাও নেবেন তারা।’ 

এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেক সময় সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটলেও পুলিশ ভেতরে যেতে পারবে না। তাই এই ধরনের উদ্যোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকাগুলোতে লকডাউনের নিয়ম মানা হচ্ছে কি না তা তদারকি করবে মহানগর পুলিশ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো লকডাউন করা যাবে না।’

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলে প্রশাসনের উদ্যোগে বাসা বা এলাকা লকডাউন করে রাখা হয়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে পরিস্থিতি যখন প্রতিকূলে, তখনই সিলেট জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তবে প্রশাসনের আগেই সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছায় নিজেদের পাড়া লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন অনেকে। পাড়ার প্রবেশ পথের দ্বারেও টানানো হয়েছিল ‘লকডাউন’ লেখা সাইনবোর্ড। এ উদ্যোগে পাড়ার বাইরের কোনো মানুষ প্রবেশ করতে পারছিলেন না। এমনকি এলাকা টহলের জন্য পুলিশের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তবে এমন উদ্যোগে এলাকাগুলো বাহবা পেয়েছিল। তবে এ সুফলের বিপরীতে নেতিবাচক বিষয়ও ছিল। বাইরে লকডাউনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও, ভেতরে সবাই মেতে থাকেন উৎসবের আবহে।

সিলেট নগরের লিচুবাগান এলাকার ফটকে আড়াআড়ি বাঁশ ফেলে করা লকডাউন তুলে ফেলা হয়েছে। ছবি- সিলেট মিরর

 

নগরের লেচুবাগান এলাকার এক নৈশ প্রহরী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘লকডাউন লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড, বাঁশ এগুলো তুলে নিতে বলেছে পুলিশ। প্রতিদিন তারা এসে টহল দিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।’ এ বিষয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘পাড়ার প্রবেশ পথে লকডাউন ঝুলিয়ে রাখলেও ভেতরে তারা কিছুই মানছেন না। একসঙ্গে জড়ো হয়ে আড্ডা দেন, ক্যারাম বোর্ড খেলেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে। তাই এগুলো খুলে ফেলতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার পর সব দোকানপাট বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা এলাকাগুলোয় টহল দিয়ে দেখব। কেউ অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।