লকডাউন না মানায় ঝুঁকি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ১৭, ২০২০
০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২০
০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন



লকডাউন না মানায় ঝুঁকি বাড়ছে

ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। হাট-বাজারে পা ফেলার ফুসরত নেই। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দেদারসে চলছে যানবাহন। নগরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে চলছে আড্ডা-খেলাধুলা। এসব দৃশ্য সিলেট নগর আর বিভাগের চার জেলার। কোথাও নেই লকডাউন মানার চিত্র। অথচ গতকাল বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের চার জেলায় সবমিলিয়ে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের শনাক্ত হয়েছে। এঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক থেকে বৃহত্তর সিলেট ক্রমশ বাজে পরিস্থিতির দিক এগুচ্ছে বলে সাধারণ মানুষজন মনে করছেন। অথচ এটিকে অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে সচেতন মানুষজন অভিযোগ করছেন। অনেকের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনায় বার বার মানুষজনদের ঘরে থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। এরপরও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই বাসার বাইরে বেরোচ্ছেন, অযথাই ঘোরাফেরার পাশাপাশি আড্ডা দিচ্ছেন। অনেক তরুণ ও কিশোরেরা মাঠে-গলিতে খেলাধুলাও করছেন। দ্রুত যদি এসব থামানো না যায়, তাহলে সিলেটে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ রূপ পেতে পারে।

সচেতন বাসিন্দাদের অভিমত, সিলেট এমনিতেই প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। করোনা পরিস্থিতির আগে-পরে সিলেটে প্রচুরসংখ্যক প্রবাসী এসেছেন। এখন সম্প্রতি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে প্রচুরসংখ্যক গার্মেন্টসকর্মী সিলেটের চার জেলাতেই নিজ বাড়িতে এসেছেন। এঁরা হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় ঝুঁকি বাড়ছে। এসব কর্মীরা হাটবাজারে অবাধে ঘোরাফেরার পাশাপাশি আড্ডা দিচ্ছেন। অনেকে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতেও যাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই গার্মেন্টস কর্মীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ক্ষেত্রে আরও তৎপরতা চালাতে হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস এখন দ্রুত ছড়াচ্ছে। ফলে এ সময়টাতে সাবধানতা অবলম্বন করে সবাইকে বাড়িতেই থাকা উচিত।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সিলেট জেলায় তিনজন, সুনামগঞ্জ জেলায় দুইজন এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় একজন করে করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজারের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনো উপসর্গ পাওয়া গেলে দ্রুত তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন শুরু থেকেই তৎপর ছিল। এ কারণেই সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে করোনা-আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার পরপরই দ্রুততার সঙ্গে জেলা তিনটি লকডাউন করা হয়েছিল। অন্যদিকে হবিগঞ্জ জেলাকেও দ্রুততার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতসব করা হয়েছে মানুষের ভালোর জন্য। অথচ মানুষজন নিয়ম ভঙ্গ করে অযথাই ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন। এমনকী নিম্œআয়ের মানুষেরা যেন ঘরে থাকেন, সেজন্য বাড়িতে বাড়িতে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পর্যন্ত বিতরণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মানুষজন সাধারণ ভিড় করছেন হাট-বাজারে বেশি। পাইকারি বাজার থেকে শুরু করে মাছ, সবজি ও মুদি দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। গ্রামাঞ্চলের মানুষ গ্রামে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, খেলাধুলা করছেন। কোয়ারেন্টিনে না থাকার এ বিষয়টি করোনোভাইরাসের বিস্তারে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে বলে চিকিৎসক, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সচেতন বাসিন্দারা মনে করছেন। অন্যদিকে নগর ও জেলার সড়ক-মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, রিকশা-অটোরিকশা, সিএনজি ও মাইক্রো চলাচল করতেও দেখা যাচ্ছে। যানবাহনের অবাধ চলাচল ঠেকাতে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের চৌহাট্টা, সুবিদবাজার, বাগবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশ বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছে। এতে যান চলাচলের বিষয়টি সীমিত হয়ে পড়বে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঘরের বাইরে অযথাই মানুষজন বেরোচ্ছেন, এটা নিয়ে একটু কটু কথা বললে মানুষজন বিরক্ত হচ্ছেন। আবার ভালো কথা বলে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠাতে চাইলেও তাঁরা কুতর্ক করছেন। সারা বিশ্বব্যাপী করোনা-আক্রান্ত হয়ে এত মানুষ যে মারা যাচ্ছে, এসব সংবাদ পেয়েও মানুষজন সচেতন হচ্ছেন না। এটা খুবই হতাশাজনক।

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল সম্প্রতি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা বার বার মানুষজনকে ঘরে থাককে অনুরোধ জানাচ্ছি। একমাত্র ঘরে থেকেই করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। মানুষ যত বেশি বাসার বাইরে বেরোবেন, ততই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাই ঘরে থাকাই উত্তম। তবে ঘরে থেকেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। সাবধানতাই পারে করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে দূরে রাখতে।’ এদিকে শিশু-কিশোর কিংবা বয়স্ক ব্যক্তিরা যেন কোনো অবস্থাতেই বাসার বাইরে না যেতে পারেন, সেদিকে পরিবারের অভিভাবকদের সবসময় নজরদারি রাখার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।