নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১৮, ২০২০
১১:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০
১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি। অনেকেই অবসর জীবনযাপন করছেন। একঘেয়েমি কাটাতে তাই মানুষজন নানাভাবে সময় কাটাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষের মোবাইল ফোনে কথা বলার পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন। তাঁরা আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের খোঁজ-খবর নিতে প্রতিনিয়ত মুঠোফোনে কল করছেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে ঘরবন্দি সিলেট নগরের ১৮ জন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সিলেটমিরর-এর এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কথা হয়। এসব ব্যক্তিদের সকলেই কর্মজীবী।এর মধ্যে ১১ জনই বলেছেন, আগের তুলনায় এখন তাঁদের মোবাইল ফোনে কথা বলার পরিমাণ বেড়েছে। এর বাইরে বাকি সময়টা তাঁরা টিভি দেখে কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে ৬ জন জানিয়েছেন, তাঁরা মুঠোফোনে কথা তো বলছেনই, পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব কেন্দ্রিক সময় কাটাচ্ছেন। বাকি একজন জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়ছেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন তানভীর আহমেদ। তাঁর বাসা নগরের পাঠানটুলা এলাকায়। তিনি জানান, অফিস বন্ধ থাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি তিনি সহ পরিবারের সদস্যরা মেনে চলছেন। তবে সাধারণ ছুটির এ সময়টাতে তাঁর মুঠোফোন কেন্দ্রিক আসক্তি অনেকটাই বেড়েছে। মুঠোফোনে গ্রামের বাড়িতে থাকা মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনদের প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখছেন। অন্যদিকে ফেসবুকেও তিনি প্রচুর সময় ব্যয় করছেন। কিছু ই-বই ডাউনলোড করলেও সেসব কয়েক পাতা পড়ার পর আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। অথচ ইউটিউবে সিনেমা-নাটকসহ বিভিন্ন কমেডি ক্লিপিংস দেখেই তাঁর সময় চলে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ছাত্র থাকাবস্থাতেই তাঁর পাঠাভ্যাস ছিল। তাই তিনি অবসর সময়টুকু নানা ধরনের বই পড়েই অতিবাহিত করেছেন। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি অনুবাদের বই পড়ে ফেলেছেন। এ ছাড়া গত অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে কেনা কিছু বই তাঁর পড়ার বাকি ছিল। হঠাৎ চলে আসা অবসরে তিনি এখন সেসব বই একটি একটি করে পড়ে শেষ করছেন। এ বন্ধে তিনি গতকাল পর্যন্ত ৭টি নতুন বই পড়ে শেষ করেছেন। ফাতেমা ইয়াসমীন নামের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষিকা জানান, ঘরে তিনবেলা রান্নাবান্নার পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে তাঁর। তবে আগের তুলনায় অফুরন্ত অবসর হাতে থাকায় মুঠোফোনে কথা বলা বেড়েছে তাঁর। ঘরের বাইরে বেরোতে পারছেন না, তাই সহকর্মী থেকে শুরু করে বাবার বাড়ির লোকজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে এখন প্রায়ই যোগাযোগ হচ্ছে তাঁর।
করেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব মহিতোষ দাশ বলেন, ‘আমি একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করি। করোনাভাইরাসের জন্য যেদিন থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকে আমাদের অফিসও বন্ধ। ঘরে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তবে বিরক্তি বোধ হলেও নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থেই বাসার বাইরে বেরোচ্ছি না। তিনবেলা খাওয়া, মুঠোফোনে কথা বলা আর টিভি দেখা ছাড়া কোনো কাজই যেন আমার নেই! দ্রæত এই অন্ধকার সময় দূর হোক। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। আর ঘরবন্দি জীবন ভালো লাগছে না। এখন কেবল মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে।’
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা আলাপকালে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনায় মানুষজন ঘরবন্দি। তাই সময় কাটাতেই অনেকে নিজেদের পছন্দ মতো কাজ করে সময় কাটাচ্ছেন। তবে এর মধ্যে প্রত্যেকেই কমবেশি মুঠোফোনে কথা বলেই সময় অতিবাহিত করছেন। এর পাশাপাশি ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ টিভি দেখে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লুডু-দাবা-ক্যারাম খেলে, বইপড়ে এবং ছাদ বাগান পরিচর্যা করে সময় কাটাচ্ছেন। দু-একজন আবার বাড়ির গৃহিণীকে রান্নাবান্নার কাজেও সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া অনেকের ঘুমের পরিমাণও আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে বলে জানালেন।
সিলেট নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের সিলেটমিররকে বলেন, ‘ঘরে থেকে থেকে অলস হয়ে পড়ছি। খুব একটা কাজ কামনাই। খাওয়া আর ঘুম, এটাই যেন দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গেছে। তবে বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও হচ্ছে। অনেক আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ছিলনা, তাঁদের সঙ্গে এখন মুঠোফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।’